ইন্টারনেট কি – আজকের দিনে ইন্টারনেটের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। কারণ বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ছাড়া অনেক কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে ইন্টারটেইন্টমেন্ট করা, অনলাইন থেকে কোন কিছু কেনাকাটা করা এই সবকিছুর জন্যই ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়।
তবে যদি আপনি ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে থাকেন তাহলে আজকের দিনে ইন্টারনেট সম্পর্কে জেনে রাখা খুবই জরুরী। আজকের দিনের বেশিরভাগ কাজই ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়।
যদি আপনিও ইন্টারনেট কি, ইন্টারনেটের জনক কে, ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে, ইন্টারনেট কি কি কাজে লাগে এই সমস্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাহলে, আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে পারবেন। তাই চলুন দেরী না করে ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্র
ইন্টারনেট কি?
ইন্টারনেট হলো এক ধরনের জাল। যার মাধ্যমে দুই বা একাধিক কম্পিউটার এর মধ্যে কানেকশন তৈরি করে বিভিন্ন ইনফরমেশন শেয়ার করা হয়। দুইয়ের বেশি কম্পিউটার একত্রে কানেক্ট হওয়াকেই ইন্টারনেট বলে।
ইন্টারনেট হলো এক ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি। কম্পিউটারের মধ্যে থাকা প্রটোকলের মাধ্যমে সমস্ত কম্পিউটার গুলো একত্রে যোগাযোগ তৈরি করতে পারে।
প্রত্যেকটি কম্পিউটারের আলাদা আলাদা আইপি অ্যাড্রেস থাকার কারণে, ইন্টারনেটে কোন কম্পিউটারের নির্দিষ্ট লোকেশন, আইপি অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে প্রবেশ করার পর, নির্দিষ্ট কম্পিউটারটি অন্যদের ডাটা share এবং receive করতে পারে।
কোন কম্পিউটারকে ইন্টারনেটে কানেক্ট করে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে তথ্য দেওয়া নেওয়া করা হয়ে থাকে। এইজন্য আজকের দিনে যোগাযোগের অন্যতম এবং প্রধান মাধ্যম হলো ইন্টারনেট।
ইন্টারনেট অর্থ কি?
ইন্টারনেট এর বাংলা অর্থ হল অন্তর্জাল। এই জালের মাধ্যমে দুইয়ের বেশি কম্পিউটার কে একত্রে কানেক্ট করা হয়।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার একসাথে কানেক্ট হওয়ার কারণে এটিকে ‘মহাজাল‘ ও বলা হয়।
ইন্টারনেট কাকে বলে?
দুই বা দুইয়ের বেশি কম্পিউটার কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে, একে অপরের সাথে, কানেকশন তৈরি করলে তাকে ইন্টারনেট বলে।
একটু অন্য ভাবে বললে:
দুইয়ের বেশি কম্পিউটার যখন ইন্টারনেট প্রটোকল এর মাধ্যমে, কোনো network এর দ্বারা একত্রে যোগাযোগ তৈরি করে, তখন সেই connection বা network টিকে ইন্টারনেট বলে। ইন্টারনেট হলো পৃথিবীর সবথেকে বড় নেটওয়ার্ক।
ইন্টারনেট কবে শুরু হয়?
১৯৬৯ সালে আমেরিকা যখন চাঁদে পা রাখে, সেই সময় Advance Research Project Agency বা ARPA, ৪ টি কম্পিউটার একসাথে কানেকশন করে, তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার করে।
ইন্টারনেট এর জনক কে – ইন্টারনেট আবিষ্কার করেন কে?
ইন্টারনেটের আবিষ্কারক কোন একজন ব্যক্তি নয়। ইন্টারনেট এর আবিষ্কার এর পিছনে একাধিক ব্যক্তির কৃতিত্ব রয়েছে।
তবে,
Vint Cerf এবং Bob Kahn এই দুই ব্যক্তি ইন্টারনেটের সবথেকে মূল বিষয়টি আবিষ্কার করেন। এইজন্য এদেরকেই ইন্টারনেটের জনক বলা হয়।
ইন্টারনেট আবিষ্কারের মূল জিনিস দুটি হলো Transmission Control Protocol (TCP) এবং Internet Protocol (IP)। প্রটোকল ছাড়া একাধিক কম্পিউটার এর যোগাযোগ সম্ভব নয়।
ইন্টারনেট কিভাবে আবিষ্কার হয়
- ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সর্বপ্রথম Leonard Kleinrock, সেনাদেরকে দ্রুত বার্তা পৌঁছানোর জন্য এই ধরনের tecnique মাথায় নিয়ে আসেন।
- এরপর ১৯৬২ সালে, J.C.R. Licklider এবং Robert Taylor একধরনের Galactic Network বানানোর কথা ভাবেন। এর উপর ভিত্তি করে তারা কাজও শুরু করে দেন।
- এবং এরপর ১৯৬৫ সালে, একজন MIT বিজ্ঞানী; একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদানের জন্য Packet Swiching নামক আইডিয়া বের করেন।
- পরবর্তীকালে এই আইডিয়ার উপর ভিত্তি করে, Advance Research Projects Agency (ARPA) কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য, Network Control Protocol এর ব্যবহার করেন।
- এবং এরপর তারা কিছুটা সফল হয়ে October 29, 1969 সালে ৪ টি কম্পিউটার একসাথে কানেকশন করার পর Login লিখে, একটি থেকে অন্যটিতে পাঠিয়ে থাকেন এবং তারা সফল হন।
- এবং এরপর থেকে research এর মাধ্যমে, নতুন নতুন জিনিস ইন্টারনেটে যুক্ত করা হয়। এবং ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে।
ইন্টারনেটের প্রথম ওয়েবসাইট কোনটি?
৬ আগস্ট, ১৯৯১ সালে Berners Lee প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করেন এবং এটিকে ইন্টারনেটের Live করেন। এটিই ছিল ইন্টারনেটের সর্বপ্রথম ওয়েবসাইট।
এবং এর ওয়েব এড্রেস টি হল:
http://info.cern.ch/hypertext/WWW/TheProject.html
এটি আজকের দিনেও ইন্টারনেটে live আছে। এই এড্রেসটি থেকে আপনিও ওয়েব সাইটটি খুলতে পারবেন। যেটি দেখতে এইরকম-
ইন্টারনেট কি কি কাজে লাগে
ইন্টারনেট আজকের দিনের প্রতিটি মানুষের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। তাই ইন্টারনেট কি কি কাজে লাগে এর কোনো হিসাব নেই। তবুও যে জিনিসগুলি ইন্টারনেটে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় সেই জিনিস গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. কমিউনিকেশন করতে
কমিউনিকেশনের মানে হলো যোগাযোগ। ইন্টারনেট প্রধানত পৃথিবীতে কোন প্রান্তে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে আমাদের সেকেন্ডেরও কম সময় লাগে।
কমেন্ট করার জন্য আমরা ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক, মেসেঞ্জার এর মত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকি।
২. মনোরঞ্জনের জন্য
মনোরঞ্জনের অন্যতম দিক হলো ইন্টারনেট। আজকের যুগে গান শোনা, ভিডিও দেখা, ছবি দেখা, সিনেমা দেখা এই সমস্ত কিছুর জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন।
খুবই সহজ পদ্ধতিতে নিজের পছন্দের যেকোন জিনিস ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজে খুজে পাওয়া যায়। এইজন্য মোবাইলে এবং কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মনোরঞ্জনের জিনিস আমরা দেখতে পাই।
৩. অনলাইন থেকে পণ্য কিনতে
আমার জানি অনলাইন থেকে পণ্য কেনা আজকের দিনে খুবই সহজ উপায়। কোথাও না গিয়ে বাড়িতে বসে অনলাইন শপিং করার জন্য, ইন্টারনেট কাজে আসে।
ইন্টারনেটে অনেক ধরনের ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে। এই সমস্যার কারিগরি খুলে নিয়ে খুব সহজেই অনলাইন থেকে যেকোনো ধরনের জিনিস কেনা যায়।
৪. শিক্ষা-দীক্ষার জন্য
আজকের ভিডিও কলের মাধ্যমে শিক্ষা দীক্ষা, নোট পাঠানো এই সমস্ত কিছু অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। যেখানে ছাত্র এবং শিক্ষক দুজনেই বাড়িতে বসে শিক্ষা নিতে পারে।
এবং ইন্টারনেটে অনেক ধরনের Online Tutor Website রয়েছে যেখান থেকে খুব সহজেই, শিক্ষক খুঁজে নিয়ে অনলাইনে ক্লাস করা হয়।
৫. ইনফর্মেশন খুঁজে বার করতে
আজকের দিনে ইন্টারনেটের সমস্ত ধরনের ইনফরমেশন আছে। কোন ব্যক্তির যদি কখনো কোনো ইনফরমেশন এর প্রয়োজন হয়, সেই ব্যাক্তি সরাসরি ইন্টারনেট থেকে সেটি খুঁজে বের করে নিতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের বই এবং নিউজপেপার ছাড়াই, অল্প ক্লিকে যে কোন ইনফরমেশন খুঁজে পাওয়ার সেরা মাধ্যম হলো ইন্টারনেট।
ইন্টারনেট কিভাবে চলে – ইন্টারনেট কিভাবে তৈরি করে
ইন্টারনেট চালানোর জন্য বিশেষ ধরনের optical fibre ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি একধরনের Cable যুক্ত তার।
এই ধরনের তার বা Optical Fibre Cable, সমুদ্রের নিচে দিয়ে ৮ লক্ষ কিলোমিটার এর বেশি জায়গা দিয়ে লম্বা ভাবে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে গোটা পৃথিবী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।
এই cable এর ওপর দিয়ে যাতে কোন জাহাজ না আসে, এইজন্য ২৪ ঘন্টা পাহারা দেওয়া হয়। এবং যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই জায়গায় গিয়ে, পুনরায় সমস্যার সমাধান করা হয়।
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে
ইন্টারনেট তিনটি জিনিসের ভিত্তিতে কাজ করে।
১. Server
২. Internet Service Provider
৩. Web Browser
Server মানে হলো যেখানে ওয়েবসাইটের সমস্ত ডেটা গুলি জমা থাকে। সার্ভিস প্রোভাইডার বা টেলিকম সার্ভিস আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগ করার অনুমতি দেয়। এবং ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে আমরা কোন রিকুয়েস্ট ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কে পাঠাতে পারি।
আমার যখন ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে কোন কিছু সার্চ করি, তখন সেই ওয়েব ব্রাউজার টি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কে, নির্দিষ্ট query টি খুঁজে বের করার রিকুয়েস্ট পাঠায়।
তারপর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করে। এবং সার্ভার নির্দিষ্ট জিনিসটি খুঁজে সার্ভিস প্রোভাইডার কে দিয়ে দেয়।
এরপর সার্ভিস প্রোভাইডার, ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে আমাদেরকে সেই জিনিসটি দেখায়।
এরকমভাবে ইন্টারনেট কাজ করে। আর এই সমস্ত কিছু খুবই অল্প সময়ের মধ্যে হওয়ার কারণে আমরা এই সম্পর্কে বুঝতে পারিনা।
ইন্টারনেটের ব্যবহার কি কি – ইন্টারনেটের সুবিধা
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির সাথে খুবই অল্প সময়ে, যোগাযোগ করা যায়।
- কোথাও না গিয়ে ঘরে বসে অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন।
- আপনার ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানকে বাড়িতে বসে ম্যানেজ করতে পারবেন।
- রেল বা বিমানের টিকিট বুক করতে পারবেন।
- সিনেমা দেখতে পারবেন।
- গান শুনতে এবং ডাউনলোড করতে পারবেন।
- কোনো ব্যক্তির সাথে মেসেজ বা চ্যাট করে, কথাবার্তা বলতে ইন্টারনেট কাজে লাগে।
- Video Calling করতে পারবেন।
- কোন গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য লোকেশন দেখতে পারবেন।
- কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইমেইল পাঠাতে পারবেন।
- ইত্যাদি।
ইন্টারনেট সংযোগ কি?
দুইয়ের বেশি কম্পিউটার কে একত্রে কানেকশন করে, তাদের মধ্যে সংযোগ গঠনের প্রক্রিয়া কেই ইন্টারনেট সংযোগ বলা হয়। ইন্টারনেট সংযোগ করার ফলে, একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।
ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতি –
ইন্টারনেট সংযোগের জন্য কোন কম্পিউটার বা মোবাইলের কোন ওয়েব ব্রাউজার খুলে নিয়ে, নির্দিষ্ট ব্রাউজার এর সার্চ বক্সে; কোন জিনিস সার্চ করলেই আপনি, ইন্টারনেটের জগতে বা ওয়েব দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন।
ইন্টারনেট সংযোগ করার পর আপনি ছবি দেখা, ভিডিও গান শোনা, সিনেমা দেখা, ইনফরমেশন নেওয়া, ব্রাউজিং করা, লোকেশন বের করা এই সমস্ত কিছু করতে পারবেন।
ইন্টারনেট প্রটোকল কাকে বলে
ইন্টারনেট এর মাধ্যমে, একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদান করার জন্য এক ধরনের নিয়মের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হয়। এই সমস্ত নিয়ম গুলিকে একত্রে ইন্টারনেট প্রটোকল বলে।
সুতরাং ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে কিভাবে ডাটা আদান প্রদান করা হবে, এই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রন করে ইন্টারনেট প্রটোকল। এবং ইন্টারনেট প্রটোকল এর তথ্য আদান-প্রদান এর প্রক্রিয়াটিকে Packet switching বলা হয়।
ইন্টারনেট সার্ফিং কাকে বলে
যখন কোন ব্যক্তি কোন চিন্তা এবং লক্ষ্য ছাড়াই, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন ডাটা খুঁজে বের করলে, তখন তাকে ইন্টারনেট সার্ফিং বলে।
যখন কোন ব্যক্তি বিরক্ত বোধ করে তখন সে কোন কিছু চিন্তাভাবনা না করেই, ইন্টারনেটে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে। এই জিনিসগুলো হলো ইন্টারনেট সার্ফিং।
উপসংহার
আশা করি উপরের ইনফরমেশন থেকে ইন্টারনেট কি বা কাকে বলে, ইন্টারনেট আবিষ্কার কে করেন, ইন্টারনেট কি কাজে লাগে, ইন্টারনেট কিভাবে উৎপন্ন হয়, ইন্টারনেট কিভাবে আসে এই সমস্ত কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন।
যদি এখনও ইন্টারনেট সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
আরও পড়ুন:
It was very informative…thanks for these 🥰