মেমোরি কার্ড কাকে বলে এবং Memory Card কত প্রকারের হয়?

আজকাল মেমোরি কার্ড একশোর মধ্যে 90% মানুষ ব্যবহার করে। যেটিকে আমরা বিভিন্ন ডিভাইস এ, ছবি, ফটো, ফাইল, স্টোর করে রাখতে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আপনি জানেন কি মেমোরি কার্ড কয় প্রকারের হয় বা মেমোরি কার্ডের ক্লাস কি?

যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলে মেমোরি কার্ড কাকে বলে, মেমোরি কার্ড কয় প্রকার এবং কিছু ভালো মেমোরি কার্ড কোম্পানির নাম জেনে যাবেন। যার মাধ্যমে মেমোরি কার্ড সম্পর্কে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। তাই চলুন মেমোরি কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

মেমোরি কার্ড কাকে বলে?

ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইল, ফোন, পিসি এসবের মধ্যে ভিডিও ফাইলকে স্টোর করবার জন্য যে জিনিসটির প্রয়োজন হয়, সেটিকে মেমোরি কার্ড বলে।

কোন নির্দিষ্ট ডিভাইসের মধ্যে মেমোরি কার্ড insert করে, data storing করবার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন picture, video, audio file, document ইত্যাদি।

আলাদা আলাদা ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা সাইজের এবং আলাদা আলাদা ক্লাসের মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা হয়। এবং এর সাথে সাথে মেমোরি কার্ডের ক্যাপাসিটি এবং capabilities এর উপর নির্ভর করে, মেমোরি কার্ড কে আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করে, তাকে আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়।

মেমোরি কার্ডের সাহায্যে ডাটা স্টোর করার সাথে সাথে, অন্য ডিভাইসের সাথে কানেকশন তৈরি করে data transferring ও করা হয়।

এর মানে মেমোরি কার্ড এক ধরনের electronic storage device, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের digital media (photo, video, audio, documents etc) ডিভাইসের মধ্যে স্টোর করা যায়।

তাহলে আমরা জেনে গেলাম, মেমোরি কার্ড কাকে বলে। এবার আমরা জানবো মেমোরি কার্ড কত প্রকারের হয়ে থাকে। যেটিকে capacity, speed এবং class এর উপর ভিত্তি করে ভাগ করা হয় এবং আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়।

মেমোরি কার্ড এর প্রকার –

১. SD Card (Secure Digital Card)

যেটিকে Panasonic, SanDisk, Toshiba এর মত মেমোরি কার্ড কম্পানি ডেভলপ করেছে। SD Card এর সাইজ postage stamp এর মত হয়।

সাধারণত – digital camera, mobile phone, tablet এর মত ডিভাইসের মধ্যে ডাটা স্টোর করবার জন্য SD card এর ব্যবহার করা হয়।

SD card maximum 2GB data ধরে রাখতে পারে। কিন্তু আজকের জেনারেশনে, ইউজারকে স্যাটিসফাই করতে এসডি কার্ডকে ডেভেলপ করে, আগের তুলনায় ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয়েছে।

ক্যাপাসিটি এবং সাইজের উপর ভিত্তি করে SD Card কে তিন ভাগে ভাগ করা হয় ১) secure digital standard capacity (SDSC), ২) security digital high capacity SDHC), এবং ৩) secure digital extended capacity (SDXC)।

আলাদা আলাদা ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা Capacity এর SD card ব্যবহৃত হয়। তিন প্রকার SD card সম্পর্কে জেনে নিন।

SDSC – Secure Digital Standard Capacity

এই ক্যাটাগরিতে যে সকল মেমোরি কার্ডে গুলি আছে সেগুলি 128 MB থেকে 4GB পর্যন্ত ডাটা স্টোর করতে পারে। এবং এই বিভাগের মেমোরি কার্ডের দাম 200 থেকে 300 টাকা হয়ে থাকে।

SDHC – Secure Digital High Capacity

এই বিভাগের মধ্যে মেমোরি কার্ড গুলির সাইজ 4GB থেকে 32 জিবি পর্যন্ত হয়। এবং এগুলোর মূল্য সাধারণ এসডি কার্ডের থেকে কিছুটা বেশি।

SDXC – Secure Digital Extended Capacity

এই বিভাগের মধ্যে যে সকল মেমোরি কার্ড গুলি আছে সেগুলি 64GB থেকে 2TB পর্যন্ত ক্যাপাসিটির অন্তর্ভুক্ত থাকে। এবং আগের দুই ধরনের SD কার্ডের থেকে এই ধরনের মেমোরি কার্ডের দাম সবথেকে বেশি।

তো এখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনার কাছে যে মেমোরি কার্ডটি আছে সেটি কোন ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।

২. CF Card (Compact Flash)

CF Card হলো এক ধরনের flash Memory Card। যেটিকে ১৯৯৪ সালে SanDisk company, manufacture করে। অনেক কম খরচে ম্যানুফ্যাকচার করার ফলে, এটিকে laptop, digital camera এবং Desktop এর মধ্যে লাগানো হয়।

সাধারণ SD card এর থেকে CF Card এর সাইজ বড় হয়। এবং সস্তা হওয়ার কারণে এটিকে SLR digital camera এর মধ্যে বেশি ব্যবহার করা হয়। এইজন্য Canon, LG, Nikon, kodak, Panasonic এর মত বড় বড় ক্যামেরা কম্পানি compact flash কে ক্যামেরার মধ্যে include করে।

৩. XD Card (Extreme Digital)

FuljiFilm এবং Olympus company তাদের শুট করা ফটো স্টোর করবার জন্য, তারা নিজেরাই এই ধরনের মেমোরি কার্ড তৈরি করে। এবং এই ধরনের মেমোরি কার্ড কে XD-Picture card ও বলা হয়।

অনন্যা মেমোরি কার্ডের তুলনায় XD Card এর capacity অনেক কম। কিন্তু এটির সাইজ সাধারণ SD Card বা postage stamp এর মতই হয়। First generation এ XD Card এর size 512 MB ছিল। কিন্তু আজকের দিনে এটির সাইজ বাড়িয়ে 2GB করা হয়েছে।

৪. Mini SD Card

Mini SD card এর full form হলো Mini Secure Digital Memory Card, যেটি Panasonic or SanDisk এর দ্বারা developed করা হয়েছে।

Standard SD card এর সাথে mini SD card এর size এর পার্থক্য আছে। কারণ mini SD card, standard SD card থেকে খুবই ছোট মেমোরি Card। যার কারণে Adapter এর ভেতর insert করে mini SD card এর ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও Mini SD card এর ব্যবহার mobile phone এবং MP3 player এর মধ্যেও হয়ে থাকে।

৫. Micro SD Card

Micro SD card কে TF Card ও বলা হয়। Micro SD Card, SanDisk company এর দ্বারা developed করা, এক ধরনের SD card।

Micro SD card, সাধারণ SD card এর থেকে ছোট হওয়ার কারণে, এটিকে মোবাইল ফোনের মধ্যে বেশি ব্যবহার করা হয়। যত প্রকারের মোবাইল ফোন আছে, এর ভেতরে যে ধরনের SD card আমরা লাগিয়ে থাকি; সবগুলি micro SD card category এর মধ্যে পড়ে। Micro SD card এর capacity 128 MB থেকে, 256 GB  পর্যন্ত হয়।

Micro SD card সাধারণ SD card এর ফরমেটেই বানানো হয়েছে। যেই কারণে portable device এর ভেতরে memory space অনেক কম হওয়ার কারণবশত, micro SD card কে portable device এরমধ্যে লাগানো হয়ে থাকে। কারণ micro SD card, সাধারণ এসডি কার্ডের থেকে প্রচুর বড় হওয়ার কারণে সব মোবাইল ডিভাইসে compatible হয়ে ওঠে না। এইজন্য মোবাইলের মধ্যে মাইক্রো এবং মিনি sd কার্ড ব্যবহার করা হয়।

৬. MMC (Multi Media Card)

Multimedia card কে ডিজিটাল ক্যামেরার মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। এর কারণ, MMC card সাধারণত picture এবং video শুট করবার জন্যই তৈরি করা হয়। মাল্টিমিডিয়া কার্ডের সাইজ, স্টিকারের মত হয়ে থাকে কিন্তু এটির ক্যাপাসিটি একটি বাড়ি থেকে অনেক বেশি।

আর একটি কথা মনে রাখবেন – যে ডিভাইস Sd কার্ড সাপোর্ট করে, সেই ডিভাইস MMC card কেও সাপোর্ট করবে। কিন্তু যে ডিভাইস MMC card সাপোর্ট করে, সেই ডিভাইস SD কার্ড সাপোর্ট করে না।

৭. Memory Stick

১৯৯৯ সালে, Sony company এর দ্বারা Memory Stick release করা হয়। এটি সবথেকে ভালো গুণ হলো – কোন ডিভাইসে Memory Stick এবং Memory Card একসাথে লাগিয়ে, Deleted Data কে পুনরায় Recover বা ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়। এই জন্য এই ধরনের মেমোরি কার্ড এর ব্যবহার কম্পিউটারে সবথেকে বেশি হয়।

কিছু ভালো মেমোরি কার্ড কম্পানি

যদি আপনি মেমোরি কার্ড কিনতে চান তাহলে এই সকল মেমোরি কার্ড কোম্পানিগুলোর, মেমোরি কার্ড কিনতে পারেন। এসব কোম্পানিগুলি, ওয়ারেন্টি এবং গ্যারান্টির সাথে মেমোরি কার্ড প্রোভাইড করে।

মেমোরি কার্ড কোম্পানির নাম –

Memory card এর class কাকে বলে?

সোজা ভাষায় বলতে গেলে: Memory card class = speed of memory card

এর মানে মেমোরি কার্ড কেনার সময় মেমোরি কার্ডের ক্লাস এর উপর নির্ভর করে, নির্দিষ্ট মেমোরি কার্ডটির Transfering speed এবং Data Storing এর ক্ষমতা কেমন হবে। এবং মেমোরি কার্ডের Class এর উপর ভিত্তি করেই মেমোরি কার্ডের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

যদি কোন মেমোরি কার্ডের ক্লাস 2 হয় তাহলে সেটি সস্তা হবে এবং যদি কোন মেমোরি কার্ড ক্লাস 10 হয় তাহলে সেটি হবে ব্যয় বহুল। এর মানে, যদি ক্লাস 2 এর 4GB মেমোরি কার্ড কেনেন সেটির দাম কম হবে (২০০-৩০০ টাকা)। কিন্তু যখনই Class 10 এর 4GB মেমোরি কার্ড কিনতে চান তাহলে ১০০০-১৫০০ টাকা খরচ করতে হবে।

এইজন্য মেমোরি কার্ডের ক্লাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া একান্ত জরুরী। আগেই বলেছি Class মানে হলো Memory এর Speed ক্ষমতা। যদি আপনি একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা পাঠাতে চান তাহলে তার Transferring Speed এবং অন্য ডিভাইস থেকে ডাটা নেওয়ার সময় Incoming speed কেমন হবে; এই সমস্ত কিছুই Memory Card এর Class উপর নির্ভর করবে।

আপনি নিচে দেখতে পারেন কোন Class এর মেমোরি কার্ডের Speed কত হয়।

  • Class 2 = 2mbps
  • Class 4 = 4mbps
  • Class 6 = 6mbps
  • Class 10 = 10mbps
  • Mbps = per second কত MB data transfer হচ্ছে।

Note – যদি মোবাইলের মধ্যে মেমোরি কার্ড লাগাতে চান তাহলে আপনি Class 2 থেকে Class 6 এর মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি আপনি DSLR ক্যামেরা এর সাহায্যে HD recording এর জন্য মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে চান তাহলে; Class 6 এর ওপরের মেমোরি কার্ড ব্যবহার করলে সুবিধা হবে। এর সাহায্যে হাই কোয়ালিটি ভিডিও শুট করলে Image capturing speed এর সমস্যা দেখা দেবে না।

মেমোরি কার্ড কেনার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন –

  1. মেমোরি কার্ড কেনার আগে সবসময় দেখে নিন এটি আপনার ডিভাইসের সাথে comfortable কিনা। কারণ আলাদা আলাদা electronics ডিভাইস আলাদা আলাদা ধরনের মেমোরি কার্ড সাপোর্ট করে।
  2. মেমোরি কার্ড অরিজিনাল কিনা সেটা যাচাই করে নিন। কারণ অনেক সময় বাড়িতে এসে, মেমোরি কার্ড লাগানোর পরে; দেখা যায় যে capacity এর মেমোরি কার্ড কিনেছেন তারথেকে অনেক কম capacity পেয়েছেন।
  3. একটি ডিভাইসের লাগিয়ে অন্য ডিভাইসে কোন ডাটা ট্রান্সফার করে তার transfer speed ও দেখে নিন।
  4. মেমোরি কার্ডের গ্যারেন্টি এবং ওয়ারেন্টি কাগজপত্র ভালোভাবে দেখে নিন।

উপসংহার:

আশাকরি ওপরের ইনফর্মেশন থেকে মেমোরি কার্ড কাকে বলে, মেমোরি কার্ড কয় ধরনের এবং মেমোরি কার্ড কেনার আগে কি কি মাথায় রাখতে হয়; এইসব বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। মেমোরি কার্ড সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে এখনই কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment