কম্পিউটার কাকে বলে – আজকের দিনে কম্পিউটারের নাম শোনেননি এমন লোক খুব কমই আছে। আজকাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তবে কম্পিউটার সম্পর্কে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যেখান থেকে আপনারা কম্পিউটার কি বা কাকে বলে, কম্পিউটারের জনক কে, কম্পিউটারের প্রকারভেদ এবং কম্পিউটারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই চলুন দেরি না করে কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্র
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেটি ইউজারের দেওয়া ইনপুট ডাটাকে প্রসেস করে ইউজারকে রেজাল্ট দেখায়। সুতরাং কম্পিউটার হল এমন একটি ডিভাইস যেটি ইউজার এর প্রতিটি নির্দেশ পালন করে।
বন্ধু-বান্ধবদের মেসেজ পাঠানো, কোন কিছু লিখে রাখা, ক্যালকুলেটিং করা, এন্টারটেইনমেন্ট দেওয়া এই সমস্ত কিছুর জন্য কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং কম্পিউটার ইউজার দেওয়া প্রত্যেকটি ইনপুট ডেটা প্রসেস করে ইউজারকে, তার ডাটা অনুযায়ী রেজাল্ট দেখায়।
কম্পিউটার এর জনক কে
1822 সালে চার্লস ব্যাবেজ প্রথম কম্পিউটার তৈরি করেন। এবং তিনি এই কম্পিউটারের নাম রাখেন ‘ডিফারেন্সিয়াল ইঞ্জিন‘। এই জন্য চার্লস ব্যাবেজ কে Father of Computer বলা হয়।
কম্পিউটার এর ফুল ফর্ম কি
কম্পিউটার এর ফুল ফর্ম হলো Commonly (কমনলি) Operated (অপারেটেড) Machine (মেশিন) Particularly (পর্টিকুলারলি) used for (ইউজড ফর) Technical (টেকনিকেল) and Educational (এডুকেশনাল) Research (রিসার্চ)।
C – Commonly
O – Operated
M – Machine
P – Particularly
U – Used for
T – Technical
E – & Education
R – Research
কম্পিউটার শব্দের উৎপত্তি
কম্পিউটার শব্দটি COMPUTE শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে। যার মানে হল গণনা করা। প্রথমদিকে কম্পিউটারকে শুধুমাত্র গণনা করার জন্য ব্যবহার করা হতো।
কিন্তু বর্তমান সময়ে কম্পিউটারের সাহায্যে কোন কিছু লেখালেখি করা, কঠিন হিসাব নিকাশ করা, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করা, অ্যানিমেশন তৈরি করা, বিভিন্ন জিনিস এন্ট্রি করা থেকে শুরু করে আরো বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এই জন্য তাদের আকার আকৃতি এবং কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়।
Desktop Computer
এই ধরনের কম্পিউটার গুলি ডেস্কের উপর রেখে কাজ করবার জন্য, এগুলোর নাম ডেস্কটপ কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং ছোট ছোট অফিসে এই ধরনের ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। ডেক্সটপ কম্পিউটারে মাউস, মনিটর, CPU এবং কিবোর্ড আলাদা আলাদা ভাবে রাখা হয়।
Laptop Computer
ল্যাপটপ কম্পিউটার কে আমরা ল্যাপটপ বলে চিনে থাকি। এই ধরনের কম্পিউটার এর মধ্যে মাউস, কিবোর্ড, মনিটর এবং সিপিইউ একসাথে যুক্ত করা থাকে।
এবং এই ধরনের কম্পিউটার chargeable হওয়ার কারণে, ল্যাপটপ কম্পিউটারকে কাজের সুবিধার্থে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে, নিয়ে যাওয়া যায়।
Servers
নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে অন্য কম্পিউটারে বার্তা পাঠানোর জন্য, Server কেও এক ধরনের কম্পিউটার মান্য করা হয়। একটি সার্ভারে মধ্যে কোন ধরনের ফাইল এবং ইনফরমেশন স্টোর করা থাকে। এবং সেই সমস্ত ইনফরমেশন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই জন্য সার্ভার হলো এক ধরনের কম্পিউটার।
Tablet Computer
একটি ল্যাপটপ এর থেকে অনেক ছোট একটি কম্পিউটার। ট্যাবলেট এর মধ্যে কিবোর্ড এবং মাউস থাকে না। শুধুমাত্র টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে এ ধরনের কম্পিউটারে কাজ করা হয়। এটি পকেটে ভরে যেকোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়।
Game Controller
এটিও একটি কম্পিউটার। কারণ এটির মাধ্যমে আপনি টিভির সাথে কানেকশন তৈরি করে, বিভিন্ন ধরনের গেম খেলতে পারবেন।
কম্পিউটার হার্ডওয়ার VS কম্পিউটার সফটওয়্যার
প্রতিটি কম্পিউটার হার্ডওয়ার এবং সফটওয়ারের কম্বিনেশন। এই দুটো জিনিস ছাড়া আপনি কোন মতেই কম্পিউটার চালাতে পারবেন না। এই জন্য কম্পিউটার হার্ডওয়ার এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার সম্পর্কে অল্প ধারণা থাকা প্রয়োজন।
কম্পিউটার হার্ডওয়ার
কম্পিউটারের প্রতিটি জিনিসের parts কে কম্পিউটার হার্ডওয়ার বলা হয়। মানে কম্পিউটারে যে সমস্ত মেশিনপত্র একত্র করে কাজ করানো হয় সেই জিনিস গুলো কে কম্পিউটার হার্ডওয়ার বলে।
কিবোর্ড এবং মাউস এর সাহায্যে ইনপুট দেওয়া, মনিটরের সাহায্যে কোন কিছু দেখা, সিপিইউ এর সাহায্যে প্রসেসিং করা, প্রিন্টার এর সাহায্যে আউটপুট নেওয়া এই সমস্ত কিছু যন্ত্র গুলিকে কম্পিউটার হার্ডওয়ার বলা হয়।
কম্পিউটার সফটওয়্যার
কম্পিউটারের হার্ডওয়ারকে পরিচালনা করবার জন্য যে জিনিসটির প্রয়োজন হয় সেটা হলো কম্পিউটার সফটওয়্যার। সফটওয়্যার ছাড়া আপনি কম্পিউটারে কোন কাজ করতে পারবেন না।
কম্পিউটারের প্রতিটি কাজ করবার জন্য, বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়।
সুতরাং কম্পিউটার হার্ডওয়ার যদি মানুষের শরীর হয়, তাহলে কম্পিউটার সফটওয়্যার হলো মানুষের আত্মা। যে দু’টো জিনিস ছাড়া একটি মানুষ অসম্পূর্ণ থাকে।
এর মানে এই দুটি জিনিসের মধ্যে একটি ছাড়া আপনি কম্পিউটারে কোন রকম কাজ কর্ম করতে পারবেন না।
কম্পিউটার এর বিভিন্ন অংশ
একটি কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ থাকে। সবকিছু part যুক্ত করে একটি কম্পিউটার তৈরি হয়। এখানে বিশেষ কিছু কম্পিউটারের অংশ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। যেখান থেকে আপনারা কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের কি কাজ এটি জানতে পারবেন।
মাদারবোর্ড
এটি হলো কম্পিউটারের প্রধান সার্কিট। এরমধ্যে রেম, রোম, হার্ডডিস্ক, প্রসেসর ইত্যাদি ইন্সটল করা থাকে।
মাইক্রোপ্রসেসর
কম্পিউটারের গতি এবং ক্ষমতা মাইক্রোপ্রসেসর এর উপর নির্ভর করে। এটাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) ও বলা হয়।
গ্রাফিক্স কার্ড
মনিটরের মধ্যে কোয়ালিটি পূর্ণ গ্রাফিক্স, ইউজার এর সামনে ডিসপ্লে করবার জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের ব্যবহার করা হয়।
RAM
RAM এর ফুল ফর্ম হলো রেনডম এক্সেস মেমোরি। কম্পিউটার মধ্যে একসাথে অনেক কাজ করবার জন্য RAM এর ব্যবহার করা হয়। এটি হলো কম্পিউটারের প্রাইমারি মেমোরি।
ROM
কম্পিউটার বুট করার জন্য ROM এর ব্যবহার করা হয়। এটিও কম্পিউটারের প্রাইমারি মেমোরি। এবং এটি ফুল ফর্ম হলো Read Only Memory।
হার্ডডিক্স
কম্পিউটারের সমস্ত ডাটা হার্ডডিক্স এর মধ্যে জমা হয়। যেখান থেকে কম্পিউটার ইনপুট ডাটা নিয়ে সেটাকে প্রসেসিং করে আবার ইউজারকে প্রদান করে।
DVD ড্রাইভ
CD এবং DVD চালানোর জন্য এই ড্রাইভ ব্যাবহার করা হয়।
PEN ড্রাইভ
এটি হলো একটি পোর্টেবল ডিভাইস। বিভিন্ন ধরনের পেনড্রাইভ কম্পিউটারে যুক্ত করার জন্য এই ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটার এর ব্যবহার
বড় বড় স্কুল কলেজ এবং বড় বড় কম্পানিতে এবং বাড়িতে কম্পিউটারে ব্যাবহার লেগেই থাকে। এবং বিভিন্ন কাজের ধরন অনুযায়ী কম্পিউটারের ব্যবহার আলাদা আলাদা হয়। নিচে কম্পিউটারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হল।
- ইন্টারনেট একসেস করার জন্য
- গেম খেলার জন্য
- অফিসের বিভিন্ন কাজ করবার জন্য
- ভিডিও দেখার জন্য
- গান শোনার জন্য
- বিভিন্ন ওষুধের এন্ট্রি করার জন্য
- হাসপাতালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবার জন্য
- স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর নাম এন্ট্রি করার জন্য
- এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কমিউনিকেট করার জন্য
- ভিডিও কল করবার জন্য
- বিভিন্ন এপ্লিকেশন টেস্ট করার জন্য
- ওয়েব ডেভলপ করার জন্য
- ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য
- অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার জন্য
- ভিডিও এডিটিং করার জন্য
- অ্যানিমেশন তৈরীর জন্য
- প্রেজেন্টেশন তৈরি করার জন্য
- ইত্যাদি।
উপসংহার
আশা করি উপরের ইনফর্মেশন থেকে কম্পিউটার কি, কম্পিউটার এর ফুল ফর্ম, কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন, কম্পিউটারের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখনো যদি আপনার মনে কম্পিউটার সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা কমেন্টের মাধ্যমে আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
আরও পড়ুন