হিসাববিজ্ঞান কি – হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

আজকের দিনে কোন ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানের সঠিক ফলাফল পেতে হলে একাউন্টিং করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাকে বাংলায় হিসাব বিজ্ঞান বলা হয়।

যদি একাউন্টিং সঠিকভাবে করা হয় তাহলে ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠান এর মূল কাঠামো যাতে ভেঙে না যায় তার দিকে খুব সহজেই নজর দেওয়া যায়। এই জন্য প্রতিটি ব্যবসা ও সংস্থার একাউন্টিং খুবই দরকার।

আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করব। যেখান থেকে আপনি হিসাববিজ্ঞান কি, হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব, হিসাববিজ্ঞান কয় প্রকার ও কি কি – এই সমস্ত বিষয়ে ইনফরমেশন পাবেন। যদি আপনিও অ্যাকাউন্টিং বা হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা রাখতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারেন।

হিসাববিজ্ঞান কি?

হিসাববিজ্ঞান হলো একটি বাংলা শব্দ এবং এর ইংরেজি হল একাউন্টিং। হিসাববিজ্ঞান বা একাউন্টিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যবসার আর্থিক দিক গুলির হিসাব রাখা হয়।

একটি ব্যবসার লাভ ক্ষতি, পণ্য মজুদ উৎপাদন, ঋণ ইতালি জিনিসের হিসাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই প্রত্যেকটি ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড লিখে রাখা হয়। এই রেকর্ড লিখে রাখার প্রক্রিয়া কে, একাউন্টিং বা হিসাব বিজ্ঞান বলা হয়।

আগেকার দিনে একাউন্টিং করার জন্য কাগজপত্র ব্যবহার করা হতো। কিন্তু কম্পিউটার আসার পর সবকটি বড় বড় ব্যবসা কম্পিউটারের মাধ্যমে একাউন্টিং এর কাজ করে থাকে। এই জন্য বর্তমান দিনে একাউন্টিং এর বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার চলে এসেছে। ছোট বড় প্রতিষ্ঠানগুলি নির্দিষ্ট সফটওয়ারের মাধ্যমে একাউন্টিং এর কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে।

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে?

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন ব্যবসা বা অর্গানাইজেশন এর আদান প্রদানের হিসাবপত্র রাখা হয় তাকে হিসাব বিজ্ঞান বা একাউন্টিং বলা হয়।

প্রতিটি ছোট বড় সংস্থা এবং ব্যবসার কেনাবেচা, লাভ-লোকসান ইত্যাদির হিসাব রাখতে হয়। এই হিসাবপত্র রাখাকেই হিসাব বিজ্ঞান বলা হয়।

ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানগুলি হিসাবপত্র রাখার জন্য ডায়েরি ও কাগজপত্র, ব্যবহার করে এবং বড় বড় কোম্পানিগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান পরিচালনা করেন।

একাউন্টিং বা হিসাববিজ্ঞান এর প্রকারভেদ

একাউন্টিং হল তিন প্রকারের।

  1. Personal account
  2. Real account
  3. Nominal account

Personal account

যখন কোন ব্যবসার সাথে কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোন সংস্থার একাউন্ট খোলা থাকে তখন তাকে পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট বা ব্যক্তিগত account বলা হয়।

এই ধরনের একাউন্ট কোন ব্যক্তির নাম কোন সংস্থার নাম বা কোন ব্যাংক একাউন্টের নাম এর ভিত্তিতে খোলা হয়।

এই একাউন্টের কিছু উদাহরণ হল –

  • Mohan account
  • Bank account
  • Capital account
  • Supplier or customer account

Real account

যখন কোন বস্তু বা সম্পত্তি দ্বারা কোন একাউন্ট খোলা হয় তখন তাকে রিয়েল অ্যাকাউন্ট বা প্রকৃত একাউন্ট বলা হয়।

Assets, liabilities এবং good and services এর সাথে জোড়া লেনদেন গুলি Real account এর মধ্যে পড়ে।

এ ধরনের অ্যাকাউন্ট এর কিছু উদাহরণ হল –

  • Land account
  • Building account
  • Machinery account
  • Furniture account

Nominal account

এই ধরনের একাউন্টের মাধ্যমে ইনকাম এবং এক্সপেন্সের হিসাব রাখা হয়। ব্যবসার লাভ এবং ক্ষতি এই অ্যাকাউন্ট থেকেই জানা যায়।

এই একাউন্টের কিছু উদাহরণ হল –

  • Salary account
  • Interest account
  • Discount account
  • Purchase account

হিসাববিজ্ঞান এর উদ্দেশ্য

হিসাব বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হলো – আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা। লাভ-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এবং যাবতীয় আয় ও ব্যয় সঠিকভাবে লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করা।

হিসাববিজ্ঞান এর বৈশিষ্ট্য

  1. ব্যাবসায়ী বা অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যকলাপের সঠিক ও সুশৃংখল হিসাব তৈরি করা।
  2. হিসাববিজ্ঞান আর্থিক লেনদেন সমূহকে হিসাবের বইতে যুক্তিসম্মত ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় লিপিবদ্ধ করে।
  3. হিসাববিজ্ঞানের প্রত্যেকটি কাজ একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নীতি মোতাবেক সংরক্ষণ করা হয়।
  4. হিসাব বিজ্ঞানের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে লেনদেনের হিসাব রাখা হয়।

হিসাববিজ্ঞান এর গুরুত্ব

যে কোনো ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে লাভ পাওয়ার জন্য লেনদেনের হিসাব রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইজন্য আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখতে হিসাব বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।

এছাড়া সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে হিসেবে বইতে লিপিবদ্ধ করা, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, জালিয়াতি রোধে হিসাববিজ্ঞানের অনেক ভূমিকা রয়েছে।

হিসাববিজ্ঞান এর মাধ্যমে কোন ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক ও মাসিক লাভ-লোকসান সহজে জানা যায়।

হিসাববিজ্ঞানের মূলনীতি

১) ক্রয়মূল্য/ ঐতিহাসিক মূল্য নীতি

এই নীতি অনুসারে ব্যবসায়ের স্থায়ী সম্পত্তিগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক মূল্য বা ক্রয়মূল্যে প্রদর্শন করতে হয়।

২) আয় স্বীকৃতি নীতি

আয় স্বীকৃতি নীতি অনুসারে আমরা ঐ সকল আয়কে লিপিবদ্ধ করবো যা ঐ নির্দিষ্ট হিসাবকালে অর্জিত হয়েছে। এইনীতি অনুসারে-অগ্রিম আয়কে দায় হিসেবে দেখানো হয় বকেয়া আয়কে সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়

৩) ব্যয় স্বীকৃতি/ সমন্বয়/ মিলকরণনীতি

এই নীতি অনুসারে নির্দিষ্ট হিসাবকালে প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিপরীতে খরচগুলো দেখিয়ে প্রকৃত ফলাফলনির্ণয় করা হয়। ব্যয় নগদে বা বকেয়ায় যেভাবেই সংঘটিত হয় না কেনো, তাকে ঐ বছরের আয়ের বিপরীতে চার্জ করতে হয়।

এজন্য-ব্যয়ের সাথে বকেয়া ব্যয় যোগ করতে হয় এবং অগ্রিম ব্যয় বাদ দিয়ে দেখানো হয় অবচয় হিসাবভুক্ত করা হয়।

৪) পূর্ণ প্রকাশ নীতি

হিসাববিজ্ঞান তথ্যের ব্যবহারকারীদের ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পূর্ণ প্রকাশ নীতি ব্যবহৃত হয়।

এই নীতি অনুযায়ী-জাবেদার ব্যাখ্যা দেয়া হয় ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী তৈরি করা হয় ভুল সংশোধনী জাবেদা দেয়া হয় আর্থিক বিবরণীতে টাকার পরিমাণের আন্তর্কলাম ও বহির্কলাম দেখানো হয় এবং আর্থিক বিবরণীতে খসড়া ও টীকা অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

হিসাববিজ্ঞান এর ইংরেজি

হিসাববিজ্ঞান হলো একটি বাংলা শব্দ। হিসাববিজ্ঞান কে ইংরেজিতে Accounting বলা হয়।

হিসাববিজ্ঞানের জনক কে?

হিসাবশাস্ত্রের প্রচলন করেছিলেন ইতালীয় রেনেসাঁর গণিতজ্ঞ ও ধর্মযাজক লুকা প্যাসিওলি। লুকা প্যাসিওলি ছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র একজন নিকটতম বন্ধু ও গৃহশিক্ষক।

উপসংহার

আশা করি আজকের এই ইনফরমেশন থেকে হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে, হিসাববিজ্ঞানের মূলনীতি কি এবং হিসাব বিজ্ঞানের জনক কে – এই সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। যদি এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা কমেন্টের মাধ্যমে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন

Leave a Comment