শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা | কিভাবে শিক্ষক হওয়া যায়

শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা – আমাদের দেশে ও সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সব সময়ই উচ্চ। একজন শিক্ষক হওয়া নিজেই একটি গর্বের বিষয় এবং এই গর্ব অনুভব করা অনেকের স্বপ্ন।

আপনিও যদি শিক্ষক হয়ে দেশের শিশুদের পথ দেখাতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেল থেকে শিক্ষক হওয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ইনফর্মেশন পেয়ে যাবেন। যেখান থেকে আপনি শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা, শিক্ষক হওয়ার উপায়, কিভাবে শিক্ষক হওয়া যায় এই সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত ইনফরমেশন পাবেন।

কিভাবে শিক্ষক হওয়া যায়?

শিক্ষক হতে হলে প্রথমেই জেনে নিন, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পাস না করে শিক্ষক হওয়া যাবে না। একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য, আপনাকে প্রথমে আপনার নিজের শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে হবে।

যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি সেদিকে বেশি মনোযোগ দিন, বেশি বেশি পড়ুন, সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করুন।

কারণ আপনি যখন সম্পূর্ণ শিক্ষিত হবেন তখনই আপনি ছাত্রদের শিক্ষিত করতে পারবেন।

একজন শিক্ষককে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয় এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে তার বেতন নির্ধারণ করা হয়।

শিক্ষক হতে হলে আপনাকে প্রথমে শিক্ষার স্তরটি বেছে নিতে হবে, অর্থাৎ আপনি কোন শ্রেণির শিশুদের পড়াতে চান। তার ভিত্তিতে সঠিক কোর্স করে শিক্ষক হতে পারবেন।

শিক্ষক এর প্রকারভেদ

  1. Primary Teacher (PGT) Class 1 থেকে 5th পর্যন্ত
  2. Secondary or Trained Graduate Teacher (TGT) Class 6 থেকে 10th পর্যন্ত
  3. Post Graduate Teacher (PGT) Class 10 থেকে 12th পর্যন্ত।

১) প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা (SGT/PGT)

প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার জন্য আপনাকে বিশেষ কোনো ডিগ্রী করার প্রয়োজন নেই। আপনি দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করবার পর, যেকোনো (Pre-Primary) প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক হতে পারবেন। এর জন্য আপনার শুধুমাত্র Basic Teaching Skills থাকতে হবে।

যদি চান Teacher Training Program এ অংশ নিতে পারেন। যার মাধ্যমে বাচ্চাদের পড়ানো সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা চলে আসবে।

প্রাইমারি শিক্ষক হওয়ার জন্য আপনাকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর Diploma in Elementary Education (D.El.Ed) / D.Ed (Diploma in Education) করতে হবে। যেটা দু’বছরের একটি কোর্স।

এই কোর্সটি সম্পন্ন হওয়ার পর আপনি যে কোন প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করতে পারেন। এবং সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য আপনাকে PRT পরীক্ষায় বসতে হবে।

২) হাই স্কুল শিক্ষক (TGT)

TGT শিক্ষক হওয়ার জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করবার পর Bachelor of Education (B. Ed.) নিয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে। এই কোর্সটি সম্পন্ন হওয়ার পর আপনি যেকোন প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতার জন্য আবেদন জানাতে পারেন। সরকারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য TGT এর আলাদা পরীক্ষা হয়। যেটা আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব।

৩) পোস্ট গ্রাজুয়েট টিচার (PGT)

এই ধরনের শিক্ষক হওয়ার জন্য আপনাকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করবার পর B. Ed করতে হবে। এই কোর্সেস করলে আপনি যেকোন প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকতা করতে পারবেন।

তবে সরকারী কলেজে PGT হওয়ার জন্য আলাদা পরীক্ষা দিতে হয়।

কিভাবে শিক্ষক হওয়া যায় – শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা

1. দ্বাদশ শ্রেণী পাস করুন

শিক্ষকতা করার জন্য আপনাকে দশম শ্রেণীতে পাস করতে হবে। আপনার যে বিষয়ের উপর সবথেকে বেশি আগ্রহ সেই অনুযায়ী স্টিম নির্বাচন করুন। যেমন কমার্স, সাইন্স না আর্টস এটি একাদশ শ্রেণিতেই স্থির করে নিন।

এরপর সেই অনুযায়ী পড়াশোনা করে ভালো নম্বরের সহিত পাস করার চেষ্টা করুন।

2. আপনার পছন্দের বিষয়ের উপর নজর দিন

আপনি যে বিষয়ের উপর শিক্ষক হতে চান সেই বিষয়ের ওপর ১০ th ক্লাস থেকেই বেশি নজর দিন। এবং সেই বিষয়টি সম্পর্কে বেশি পরিমাণে জানার কৌতূহল ও আগ্রহ রাখুন। কারণ আপনি যেগুলি শিখবেন সেগুলি আপনি পরবর্তীকালে আপনার ছাত্রদের শেখাতে পারবেন।

3. গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করুন

শিক্ষক হওয়ার জন্য গ্রাজুয়েশন করা আবশ্যক। আমি যে বিষয়ের উপর সবথেকে বেশি আগ্রহী সেই বিষয় নিয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করুন। যেটা আপনাকে ভবিষ্যতে অনেক সুবিধা দেবে।

4. B.Ed কোর্সের জন্য আবেদন করুন

গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর আপনাকে B.Ed কোর্সের জন্য আবেদন করতে হবে। এই কোর্সে আবেদন করতে হলে আপনার গ্যাজুয়েশনে ৫০% থাকা অবশ্যক। এই কোর্সটি দু বছরের হয়ে থাকে। এই কোর্সটি শেষ করার পর আপনি যে কোন স্কুলের শিক্ষক হতে পারবেন।

5. CTET বা TET exam ক্লিয়ার করুন

সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য আপনাকে B.Ed কোর্সের পর, CTET বা TET exam ক্লিয়ার করতে হবে। এই পরীক্ষার পর একটি Merit list তৈরি হয়। এই লিস্টের মধ্যে আপনার marks যত বেশি হবে, আপনি তত ভালো সরকারি স্কুলে ও পদে চাকরির সুযোগ পাবেন।

এইভাবে আপনি একজন সরকারী শিক্ষক হতে পারবেন।

শিক্ষক হওয়ার প্রমুখ কোর্স

B.Ed (Bachelor Of Education)

এটি হলো এমন একটি কোর্স , যেটি আপনি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর করতে পারবেন। এই কোর্সটি দু’বছরের।

এই কোর্সটি আপনি সরকারি বা প্রাইভেট যে কোন কলেজ থেকে করতে পারেন। এই কোর্সটি সম্পন্ন করার পর আপনি যে কোন প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক হতে পারবেন। আর যদি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতে চান, তাহলে CTET বা TET exam ক্লিয়ার করতে হবে।

D.Ed (Diploma in Education)

এটি হলো একটি ডিপ্লোমা কোর্স, যেটি দু’বছরের হয়ে থাকে। এই পোস্টটি আপনি দ্বাদশ শ্রেণী পাস করবার পর, গ্রাজুয়েশনের সাথে সাথেই করতে পারেন।

শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষা

TET (Teacher Eligibility Test)

এই পরীক্ষাটি রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। রাজ্যের মধ্যে, সরকারি শিক্ষক হওয়ার জন্য আপনি TET পরীক্ষা দিতে পারেন। TET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, আপনি 1 থেকে 8 শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষক হতে পারবেন।

TET পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আপনার গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট সহ B.Ed থাকতে হবে এবং
আপনার সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে ৩৫ বছরের মধ্যে।

CTET (Central Teacher Eligibility Test)

এই পরীক্ষাটি ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। এই পরীক্ষাটি সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান।

CTET পরীক্ষার জন্য আপনাকে গ্রাজুয়েশন এর পাশাপাশি B.Ed বা প্রাথমিক শিক্ষায় দুই বছরের ডিপ্লোমা (D.Ed/D.El.Ed) থাকতে হবে। এছাড়া প্রার্থীকে ভারতের নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।

একজন শিক্ষকের বেতন কত?

যদি আপনি প্রাইভেট শিক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ক্যাপাবিলিটি অনুযায়ী আপনাকে বেতন দেওয়া হয়। যদি আপনি কোন বিষয়ের ওপর সাজেশন সম্পন্ন করেন এবং আপনার একটি বিশেষ সার্টিফিকেট থাকে তাহলে আপনার বেতন বেশি হবে।

সরকারি ক্ষেত্রে শিক্ষকের বেতন, প্রাইভেট শিক্ষকের তুলনায় বেশি। বর্তমানে, ভারতে একজন শিক্ষকের বেতন মাসিক, 23000 থেকে শুরু করে এক লাখ কুড়ি হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

উপসংহার

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে কিভাবে শিক্ষক হওয়া যায়, শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা কি লাগে, শিক্ষক এর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনি একজন শিক্ষক হতে চান তাহলে উপরে দেওয়া স্টেপ গুলি ফলো করে, একজন শিক্ষক হতে পারবেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Comment