মাউস কি – আমরা প্রত্যেকেই প্রায় কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। এবং কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ করবার জন্য যে ইনপুট দেওয়া হয়, সেই ইনপুট দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনপুট ডিভাইস নিয়ে কাজ করি। ইনপুট ডিভাইসগুলি মধ্যে মাউস ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাউস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যেখান থেকে মাউস কি, মাউস কে আবিস্কার করেন, মাউস কয় প্রকার এবং মাউস কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেব। যদি আপনিও মাউস সম্পর্কে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর গুলো জেনে নিতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
সূচিপত্র
মাউস কি?
মাউস হল কম্পিউটারের একটি ইনপুট ডিভাইস। এটির সাহায্যে পয়েন্টার করে কম্পিউটারকে ইনপুট দেওয়া হয়। এই জন্য মাউসের অপর নাম পয়েন্টের ডিভাইস। কম্পিউটারে কোন আইটেম বেছে নিতে এবং কোন নির্দিষ্ট ফাইলকে খুলতে এবং বন্ধ করতে মাউসের ব্যবহার করা হয়।
মাউস এর সাহায্যে কোন ইউজার কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজ করবার নির্দেশ দিয়ে থাকে। এবং কম্পিউটারের যে কোন জায়গায়, পয়েন্ট করে পৌঁছানোর জন্য মাউসের ব্যবহার করা হয়।
মানুষের সাথে একটি কেবল যুক্ত করা থাকে এবং ক্যাবলের অপর প্রান্তে একটি ইউএসবি পোর্ট দেওয়া থাকে। যেই port টি কম্পিউটারে insert করলে, মানুষ কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট হয়ে যায়।
এবং একটি মাউসে দুটি সুইচ (left ও right) এবং দুটি সুইচ এর মাঝখানে একটি চাকা থাকে। কম্পিউটারে লেফট এবং রাইট ক্লিক করে কাজ করবার জন্য, সুইচ দুটি ব্যবহার করা হয়। এবং চাকাটির সাহায্যে, কোন নির্দিষ্ট পেজকে scroll করা হয়। এইজন্য চাকাটিকে scroll button ও বলা হয়।
মাউস কে আবিষ্কার করেন?
১৯৬৮ সালে Douglas C. Engelbart মাউস আবিষ্কার করেন। পেশায় তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একজন সৈনিক ছিলেন।
মাউস পয়েন্টার কাকে বলে?
মাউস ব্যাবহার করার সময়, Mouse Cursor টি কম্পিউটার স্ক্রিন এ দেখা যায়। এই cursor টি নির্দিষ্ট অংশের কাজ করার সময় বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় পয়েন্ট করা হয়। এই Cursor টির অপর নাম হলো মাউস পয়েন্টার। যেহেতু cursor এর সাহায্যে, পয়েন্ট করা হয় তাই এটিকে পয়েন্টার বলে।
মাউস কত প্রকার ও কি কি?
মাউস পাঁচ প্রকারের। সেগুলি হল –
- Mechanical Mouse
- Optical Mouse
- Wireless Mouse
- Trackball Mouse
- Stylus Mouse
১. Mechanical Mouse (মেকানিক্যাল মাউস)
১৯৭২ সালে এই মাউস তৈরি করা হয়। শুধুমাত্র একটি বলের মাধ্যমে এই মাউস ব্যবহার করা হতো। মাউসের মাঝখানের নিচে একটিমাত্র বল থাকতো, এবং সেই বলটিকে উপর-নিচে, ডাইনে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে কাজ করা হতো। এইজন্য মেকানিক্যাল মাউসকে, বল মাউস ও বলা হয়।
২. Optical Mouse (অপটিক্যাল মাউস)
এই ধরনের মাউসে কোন বল থাকে না। বলের জায়গায় শুধুমাত্র একটি বাল্ব ব্যবহার করা হয়। সেই বাল্বটিকে এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে, কম্পিউটারে পয়েন্ট করে, ইনপুট দেওয়া হয়।
যে বাল্বটি ব্যবহার করা হয় সেটি মাউসের একদম নিচের মাঝখানে থাকে। মানুষটিকে এদিক-ওদিক করা মাত্র লাইটটিও এদিক ওদিক সরে যায়। যার ফলে খুব সহজে কম্পিউটারে পয়েন্ট করা যায়। এই ধরনের মানুষের একটি কেবল থাকে যেটির এক প্রান্তে মাউস এবং অন্য প্রান্ত কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয়। আজকের দিনে যে সমস্ত মাউস ব্যবহৃত হয়, তাদের মধ্যে অপটিক্যাল মাউস এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা সব থেকে বেশি।
৩. Wireless Mouse (ওয়্যারলেস মাউস)
তার ছাড়া যে মাউস ব্যবহার করা হয় তাকে, Wireless Mouse বলে। এই ধরনের মাউস Radiofrequency টেকনিকের উপর তৈরি করে, কম্পিউটারের সাথে কানেকশন তৈরি করা হয়।
এই ধরনের মাউস ব্যবহার করার জন্য Transmitter ও Receiver এর প্রয়োজন হয়। Transmitter টি মাউসের মধ্যেই লাগানো থাকে এবং Receiver টি আলাদা করে কম্পিউটারে লাগাতে হয়।
এটি অপটিক্যাল মাউস এর মতই কাজ করে। শুধু দুটির মধ্যে পার্থক্য হল একটিতে cable থাকে এবং অপরটি Wireless।
৪. Trackball Mouse (ট্র্যাকবল মাউস)
এটির কাজকর্ম অপটিক্যাল মাউসের মতোই। এই ধরনের মানুষের একটি বল লাগানো থাকে। এবং আঙুলের সাহায্যে, বলটি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে মাউসটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এই ধরনের মানুষ তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার কারণে, কাজ করতে সময় বেশি লাগে।
৫. Stylus Mouse (স্টিলুস মাউস)
এই ধরনের মাউস কতকটা পেন এর মত দেখতে। এবং এই মাউসে একটি চাকা লাগানো থাকে। টাচস্ক্রিন ডিভাইসে এই ধরনের মাউস বেশি ব্যবহৃত হয়।
মাউস এর কাজ কি?
আমরা আগেই জেনেছি একটি ইনপুট ডিভাইস, যেটির সাহায্যে কম্পিউটারকে ইনপুট দেওয়া হয়। মাউসের সাহায্যে, বিভিন্ন ধরনের function ব্যবহার করে কম্পিউটারকে ইনপুট দিতে হয়। সেগুলি হলো –
Pointing (পয়েন্ট করা)
যখন Cursor কে কম্পিউটার স্ক্রিনের আইটেম এর উপর নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ওই আইটেমের চারপাশে একটি বক্স তৈরি হয়। মাউসের সাহায্যে একটি জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পয়েন্ট করে, কোনো ফাইলের ওপর Cursor টি রাখা হলে তাকে পয়েন্টিং বলে। এটি হলো মাউসের প্রধান কাজ।
Clicking (ক্লিক করা)
কোন ফাইলের ওপর পয়েন্ট করে সেই ফাইলটি কে, মাউসের সুইচ গুলোর সাহায্যে ক্লিক করা হলে তাকে ক্লিকিং বলে। মাউসের যে দুটি সুইচ থাকে তাদের দুটি নাম দেয়া হয়, left button ও right button।
Left button এর সাহায্যে কোন ক্লিক করা হলে তাকে Left ক্লিক বলে এবং Right বাটন এর সাহায্যে কোন ক্লিক করা হলে তাকে right-click বলে।
কম্পিউটারের নির্দিষ্ট ফাইলকে খোলার জন্য এবং অন্যান্য, রিসার্চ নিয়ে কাজ করার জন্য ক্লিক করতে হয়।
Selecting (সিলেক্ট করা)
কোন নির্দিষ্ট ফাইলের ওপর মাউস পয়েন্টার নিয়ে গিয়ে, তার ওপর left ক্লিক করলে, সেই ফাইলটি select হয়ে যায়। এটিকেই Selecting বলে। কোন ফাইল select করবার পর তার চারপাশে একটি বর্ডার তৈরি হয়, যার থেকে বোঝা যায় নির্দিষ্ট ফাইলটি সিলেক্ট করা হয়েছে।
Dragging and Dropping (ড্রগিং ও ড্রপিং)
কোন নির্দিষ্ট ফাইলকে সিলেক্ট করে সেটিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে, রাখা হলে তাকে Dragging and Dropping বলে।
Drag মানে হলো তোলা এবং Drop মানে হলো ফেলা।
কোন নির্দিষ্ট ফাইলকে dragging করবার জন্য, সেই ফাইলটির ওপর left click করে ধরে রাখতে হবে এবং সেটিকে অন্য যে স্থানে রাখতে চান সেখানে গিয়ে Dropping (ছেড়ে) করে দিতে হয়।
Scrolling (স্ক্রলিং)
কোন নির্দিষ্ট পেজের উপর থেকে নিচে স্কল করবার জন্য মাউসের চাকাটির প্রয়োজন হয়। মাউসের চাকাটি ঘোরালে তাকে স্ক্রোলিং বলে।
মাউস এর ব্যবহার কেনো করা হয়
- কম্পিউটারে কোন পেজ কে স্কল করবার জন্য
- কম্পিউটারের কোন ফাইলকে সিলেক্ট করবার জন্য
- কম্পিউটারের কোন ফাইলকে কপি এবং পেস্ট করার জন্য
- কোন ফাইলকে ট্রান্সফার করার জন্য
নতুন উইন্ডো খোলার জন্য - নির্দিষ্ট জায়গায় পয়েন্ট করার জন্য
নতুন অ্যাপ্লিকেশন এবং গেম খোলার জন্য - কোন ডকুমেন্ট সেভ করার জন্য
নতুন ডকুমেন্ট তৈরি করার জন্য।
মাউস ব্যবহারের নিয়ম
মাউস ব্যবহার করার জন্য, প্রথমে মাউসটির port টি কম্পিউটারের usb পোর্ট এর মধ্যে প্রবেশ করান। যার ফলে মাউসটি কম্পিউটারের সাথে, কানেকশন তৈরি করতে পারবে।
কানেকশন তৈরি করা হয়ে গেলে, মানুষটিকে এদিক-ওদিক সরিয়ে, কম্পিউটারের নির্দিষ্ট জায়গায় পয়েন্ট করুন।
পয়েন্ট করার পর লেফট এবং রাইট ক্লিক এর সাহায্যে নির্দিষ্ট ফাইলটি খুলে নিন। এবং scroll বাটন এর সাহায্যে কোন পেজ এর উপর থেকে নিচে পর্যন্ত scroll করুন।
এরপর আপনি মাউসের সাহায্যে নিজের ইচ্ছে মত কাজ করতে পারেন।
মাউস কোন ধরনের ডিভাইস?
কম্পিউটারের ইনপুট দেয়ার জন্য মাউসের ব্যবহার করা হয়। তাই মাউস হলো একটি ইনপুট ডিভাইস।
মাউস কোন প্রজন্মের আবিষ্কার?
মাউস দ্বিতীয় প্রজন্মের আবিষ্কার।
মাউস ইনপুট নাকি আউটপুট?
মাউস ইনপুট ডিভাইস।
উপসংহার:
আশাকরি উপরের ইনফর্মেশন থেকে মাউস কি, মাউস কাকে বলে, মাউস প্রকার ও কি কি, মাউস কে আবিষ্কার করেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন। যদি মাউস সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
আরও পড়ুন:
THANK YOU
Welcome