মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে – কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ

মহাভারতে অনেক যোদ্ধা ছিলেন। বিভিন্ন যোদ্ধা বিভিন্ন ব্যক্তির দৃষ্টিতে মহাভারতের সেরা যোদ্ধা হতে পারেন। কেউ বলবেন অর্জুন সেরা যোদ্ধা, আবার কেউ বলবেন কর্ণ সেরা যোদ্ধা। আবার কেউ কেউ পিতামহ ভীষ্ম কে বড় যোদ্ধা মনে করেন।

এই জন্য আলাদা আলাদা দিক থেকে ধরতে গেলে এরা প্রত্যেকেই শক্তিশালী যোদ্ধা। কিন্তু যদি মহাভারতের সেরা যোদ্ধা কে? – এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে বলা হয়, তাহলে অনেকেই দিতে পারবে না।

এই জন্য আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা মহাভারতের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা কে? এই সম্পর্কে আলোচনা করব। এখানে শুধুমাত্র আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং আমাদের দিক দিয়ে মহাভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা কে তুলে ধরা হয়েছে।

তাই চলুন দেরী না করে মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে? এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে?

আমার মতে মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হলেন সূর্যপুত্র কর্ণ। তার এই শ্রেষ্ঠতার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। এই কারণগুলি একটি একটি করে দেখে নিন।

১. মহাভারতে অর্জুন সম্পূর্ণরূপে কৃষ্ণের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু কৌরব পক্ষের দুর্যোধন সম্পূর্ণরূপে কর্ণের উপর নির্ভরশীল ছিলেন।

২. আচার্য দ্রন, কৌরবদের এবং পান্ডবদের সম্পূর্ণরূপে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কর্ণ কে শিক্ষা দেন নি। এইজন্য কর্ণ ছলনা করে পরশুরামের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ছিলেন।

এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে কর্ণ যদি অর্জুনের মত যোগ্য না হতো, তাহলে তিনি কর্ণকে শিক্ষা দিতেন না।

৩. ভগবান ইন্দ্র, কর্নের বর্ম এবং কুন্ডল প্রতারণা মূলক ভাবে দখল করা সত্বেও, কর্ণ একজন বীর যোদ্ধার মত যুদ্ধ করেছিলেন।

৪. তার কাছে পরশুরামের দেওয়া শিবের বিজয় ধনুক ছিল। যদি কর্ণ মারা যাওয়ার সময় তার হাতে সেই ধনুকটি থাকত তাহলে তাকে হত্যা করা যেত না।

৫. কর্ণ ছিলেন দুর্যোধনের একজন সত্যি কারের বন্ধু। এবং এর পাশাপাশি সবথেকে বড় দাতাও ছিলেন।

৬. কর্ণ একাই জরাসন্ধকে পরাজিত করেছিলেন। অন্যদিকে ভীম শ্রীকৃষ্ণের সহায়তা নিয়ে, প্রতারণা করে জরাসন্ধকে হত্যা করেছিলেন।

৭. রাজা ভগদত্ত কে অর্জুন পরাজিত করতে পারেননি। কিন্তু কর্ণের কাছে তিনি পরাজয় স্বীকার করেন।

৮. কর্ণ তার মাতা কুন্তিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি অর্জুনকে ছাড়া তার অন্য কোন পুত্রকে হত্যা করবেন না। এইজন্য বাকি ৪ পাণ্ডব, বারবার কর্নের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাদের হত্যা করেননি।

৯. অশ্বসেন নামক এক সর্প, অর্জুনকে দংশন করার প্রতিশোধ নিলে, কর্ণ তাকে হত্যা করতে বারণ করেন।

মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে - কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ

১০. কর্ণ বীরযোদ্ধা হওয়ার কারণে তাকে ধনুক বিহীন করে, অসহায় ভাবে হত্যা করা হয়।

১১. মহাভারতের যুদ্ধে, কর্ণের তীরে যখন অর্জুনের রথ কিছুটা পিছিয়ে যায় তখন কৃষ্ণ তাকে প্রশংসা করেন।

তখন অর্জুন কৃষ্ণাকে বলেছিলেন যে, “যখন আমার তীরে কর্ণের রথ কয়েক গজ পিছিয়ে যায় তখন তো আপনি আমার প্রশংসা করেন নি। আর তার তীরে আমার রথ কয়েক ইঞ্চি পিছিয়ে যেতেই তার প্রশংসা করছেন?”

কৃষ্ণ এর উত্তরে বলেছিলেন “কর্ণের রথে যিনি সারথি আছেন, তিনি হলেন একজন মানুষ। এবং তোমার রথে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এবং হনুমান বসে আছি। তারপরেও কর্ণ আমাদের রথ টিকে ধনুর্বিদ্যার সাহায্যে পিছনে ঠেলে দিল”।

কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ

উপরের এই দশটি কারণ দেখলেই বোঝা যায় যে অর্জুনের থেকে কর্ণ মহাভারতের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা ছিল। সে অনেক সুযোগ সুবিধা না পেয়েও, অনেক কষ্টের মধ্যে থেকে ধনুর্বিদ্যার শিক্ষা পেয়েছেন।

এবং অনেক খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, শুধুমাত্র একা সারাটা জীবন লড়াই করে গেছেন।

এইজন্য “কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?” এই প্রশ্নের উত্তরে আমি কর্ণকেই বেছে নিলাম।

উপসংহার

আশাকরি উপরের ইনফর্মেশন থেকে মহাভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা কে এবং মহাভারতের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা কে? – এই সম্পর্কে আপনারা আমাদের মতামত পেয়ে গেছেন। তবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে মহাভারতের সেরা যোদ্ধা কে? – এটা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

আরও পড়ুন

2 thoughts on “মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে – কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ”

  1. আপনি যে মতামতগুলো দিয়েছেন আমি তার বিরোধিতা করছি অবশ্যই যুক্তির সাহায্যে –
    1. প্রথম পয়েন্টের উত্তরে আমি একটা বলতে চাই কারও বীরত্ব অথবা শ্রেষ্ঠত্ব কি শুধুমাত্র তার উপর কতজন নির্ভরশীল তার উপর নির্ভর করে?
    2. আচার্য দ্রোণাচার্য তার অনেক শিষ্যকেই (এমনকি ভীম, নকুল ও সহদেবকেও) ব্রহ্মাস্ত্রের জ্ঞান দেয়নি যেমনটা কর্ণকেও দেয়নি। কর্ণ অন্তত তার চেয়ে দশ বছরের ছোট অর্জুনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিল ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে। এটা জানার পর কর্ণকে কীভাবে উনি ব্রহ্মাস্ত্র দেবেন? বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার হিটলারকে পরমাণু অস্ত্র দিয়েছিলেন কী? আর কর্ণ এতো quality যুক্ত যোদ্ধা হলে তার মিথ্যা পরিচয়ের কোনো প্রয়োজনই থাকত না।
    3. কর্ণ কবচ-কুন্ডল থাকা সত্ত্বেও দ্রুপদের কাছে হেরেছে(আদি পর্ব), অর্জুনের কাছে হেরেছে (আদি পর্ব), ভীমের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে (সভাপর্ব), গন্ধর্বরাজ চিত্রসেনের কাছে হেরে পালিয়েছে (বনপর্ব) । অর্জুন প্রথম ও শেষ জনকে যুদ্ধে জয় করে। কবচ কুন্ডল দান করেননি তিনি বিক্রয় করেছিলেন। কারণ তিনি ইন্দ্রকে আগেই বলেছেন আপনি কিছু না দিলে আমি আপনাকে কবচ কুন্ডল দেবো না।
    4. বিজয় ধনুক কতগুলো ছিল? একটা কৃষ্ণের শ্যালক রুক্মির কাছে (ভারতের রচয়িতা ব্যাসদেবের শিষ্য বৈশম্পায়ণ বলেছেন) আরেকটার কথা একবারই উচ্চারিত হয়েছে কর্ণের মুখ দিয়ে দূর্যোধনের সামনে (ভীষ্ম, দ্রোণ,কৃপাচার্য, অশ্বত্থামা, শল্য কারোর সামনে বলেননি এরা কিন্তু মহাভারতে বারবার কর্ণের নানা কথার বিরোধিতা করেছেন)। বিজয় ধনুক কি অজস্র ছিল নাকি?
    5. এদের বন্ধুত্ব ছিল নেওয়া দেওয়ার বন্ধুত্ব। আসলে কর্ণের চেয়ে বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা দূর্যোধনের সাথে আর কেউ করেনি। কারণ কর্ণ যে একজন কৌন্তেয় এবং তিনি অর্জুন ব্যাতীত অন্য পান্ডবদের কিছু করবেই না এটা দূর্যোধন জানতই না। সে কর্ণের মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ভেবে গিয়েছে কর্ণ সমস্ত পান্ডবদের বধ করবে। কর্ণ মস্ত দাতা ? কি দান করেছিল ? – কবচ কুন্ডল? আচ্ছা আপনি বলুন তো কেউ যদি বলে যে আমাকে এটা আগে দাও তারপর আমি দেবো এটা কি দান বলা হবে? মহাভারত পড়ে দেখুন এইরকমই লেখা আছে।
    6. ভীম পরাজিত করেছিল নিজের শক্তিতেই বধ করেছিল কৃষ্ণের বুদ্ধিতে। ভীম কর্ণের তুলনা করবেন না কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীমের কাছে কর্ণ অন্তত 5-6 হেরেছে যেখানে ভীমকে হারাতে পেরেছে মাত্র একবার। সভাপর্বেও ভীমের কাছে নতিস্বীকার করে যুধিষ্ঠিরকে কর দিয়েছেন।
    7. রাজা ভগদত্ত কর্ণের কাছে পরাজয় স্বীকার কখন করেছিলেন? সভাপর্বে অর্জুন – ভগদত্তের লড়াইয়ের পর থেকেই উনি দুর্যোধনের মিত্রপক্ষে এসেছিলেন। তবে ওর সাথে কর্ণ ও কৌরবদের লড়াইটা কখন হলো?
    8. কর্ণ যুধিষ্ঠির আর নকুলকে পরাস্ত করেছিল বটে তবে সাত্যকী ও ভীমের কাছে (5-6 বার) আড়ং ধোলাই খেয়ে নিজেরই পটল তোলার যোগাড় হয়েছিল। অভিমন্যুও দুবার কর্ণি বান দিয়ে কানের চামড়া গুটিয়ে দিয়েছিল।
    9. কর্ণ বারণ করেনি দ্বিতীয় বার ব্যাবহার করবো না বলেছেন। অবশ্য দ্বিতীয়বার তক্ষক পুত্র অশ্বসেন অর্জুনের দিকে গেলে তাকে অর্জুন কেটে দেয়।
    10. অভিমন্যু, ভীষ্ম, দ্রোণকেও একইভাবে মারা হয়েছিল। নিয়ম ভাঙাটা একটা common জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধের সতেরো তম দিনে এসে।
    11. কোনো মূল মহাভারতে নেই কথাটা। YouTube এ প্রায়ই দেখা যায় তবে।

    এবার একটু অর্জুনের গুণ গাই –
    1. দ্রুপদকে বন্দী বানানো (কর্ণ অসফল)
    2. মানুষের অগম্য স্থানে গিয়েও জয় (সভাপর্ব দ্রষ্টব্য)
    3. কৃষ্ণের সাথে মিলিত হয়ে খান্ডবপ্রস্থে নাগ – দেব – লোকপাল – দিকপাল – দানব সবাইকে পরাজিত করা (মহাভারত অনুযায়ী, কৃষ্ণের চেয়ে বেশি তিনিই যুদ্ধ করেছেন)
    4. মহাদেবকে যুদ্ধে সন্তুষ্ট করা (এর পূর্বে বা এর পরে‌ এই কৃতিত্ব কারোর নেই )
    5. নিবাতকবচদের বধ করেন (রাবণ, অথবা দেবতারাও এদের পরাজিত করতে পারেননি)
    6. কালকেয়দের বধ করেন (দেবতাদের পুর্বের রাজধানী কেড়ে নিয়েছিল)
    7. কর্ণ পালিয়ে গেলেও চিত্রসেনের সাথে যুদ্ধ করে ভীমার্জুন চিত্রসেনকে পরাজিত করে দূর্যোধনকে মুক্ত করেন।
    8. বিরাট যুদ্ধে একাই ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ অশ্বত্থামা, কৃপাচার্য সহ সমস্ত কৌরবদের পরাজিত করেন।
    9. বিরাটযুদ্ধে কর্ণের সামনেই কর্ণের ভাইকে মারেন , কর্ণের বাম কানের চামড়া গুটিয়ে নেয় এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তিনবার পালাতে বাধ্য করেন। শেষে বস্ত্রটিও খুলে নিয়েছিল উত্তর।
    কুরুক্ষেত্র‌ যুদ্ধের বিবৃতি দেওয়া নিস্প্রয়োজন বলে দিলাম না।
    এবার আপনিই বলুন তো কে শ্রেষ্ঠ ।

    Reply
    • আমি সূর্যপূত্র কর্ণ সিরিয়াল দেখেছি, সেখান থেকেই এই আর্টিকেলটির সূচনা। তবে সম্পূর্ণ মহাভারত আমি অধ্যয়ন করিনি। কিছু জনপ্রিয় হিন্দি ওয়েবসাইট আমার এই আর্টিকেলটা লিখতে সাহায্য করেছে। এবং সিরিয়াল ও এই সকল ওয়েবসাইট গুলির ইনফর্মেশন এর ভিত্তিতে রিসার্চ করে আমার আর্টিকেলটা লেখা হয়েছে।

      আপনার সবকটি কথাই যুক্তিগত বলে আমি মনে করছি। তাই আপনার দেওয়া মূলবান কমেন্টটি দর্শকদের উপকারে আসবে বলে আমি মনে করছি। ধন্যবাদ।

      Reply

Leave a Comment