ছোট বাচ্চাদের পড়ানোর নিয়ম – অনেকেই নিজের বাচ্চাকে পড়াতে বসিয়ে থাকবেন বা একজন শিক্ষক হিসেবে অন্য বাচ্চাদের পড়াতে পারেন।
কিন্তু অনেক সময় লক্ষ্য করে দেখবেন, অনেক সময় কোনো কোনো বাচ্চা আপনার কথা শুনছে না বা পরতে চাইছে না।
এইরকম পরিস্থিতিতে আপনাকে, ছোট বাচ্চাদের পড়ানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।
বড় বাচ্চারা তো আপনা আপনি বুঝতে শিখে নিজেই পড়তে পারে, কিন্তু ছোট বাচ্চাদের পড়ানোর কিছু কৌশল রয়েছে। যেগুলি অনুসরণ করেই বাচ্চাদের পড়ালেখা করালে, সে আপনার কাছে পড়তে আগ্রহী হবে।
যদি আপনিও, আপনার বাচ্চাকে পড়াতে চান এবং সে যদি, পড়বার সময় আপনার কথা না শুনে, তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে বাচ্চা পড়ানোর নিয়ম গুলি জেনে নিন। যেগুলি ভবিষ্যতে আপনার বাচ্চাকে পড়ানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
সূচিপত্র
ছোট বাচ্চাদের পড়ানোর নিয়ম
এখানে বাচ্চা পড়ানোর ৮ টি নিয়ম দেওয়া হলো। এগুলি অনুসরণ করলে আশা করছি আপনার বাচ্চাও আপনার কথা শুনবে। এবং ভবিষ্যতে আপনার কাছে পড়তে বসার জন্য আগ্রহী থাকবে।
১. যেটা শেখাতে চান, সেটা আগে নিজে শিখুন
যদি আপনি কোন বাচ্চাকে পড়াতে বসেন তাহলে যে Topic নিয়ে তাকে পড়াচ্ছেন, সেটি ভালোভাবে আপনারা আয়ত্তে থাকা চাই।
এই নয় যে আপনি সেই সম্পর্কে কিছুই জানেন না, আর আপনার বাচ্চাকে সেই বিষয়ে পড়তে জোর করছেন।
যদি আপনি নির্দিষ্ট বিষয়ে কিছুই না জানেন তাহলে আপনার বাচ্চা আপনার কাছে কোনদিনও পড়তে বসবে না। আর যদিও বসে তাহলে আপনার মারের ভয়ে বসবে। আর এইরকম বাচ্চাদের গায়ে হাত দিয়ে জোর করে পড়ানোর কোনো কারনই হয়না।
এই জন্য যে বিষয়ে আপনি বাচ্চাকে পড়াতে চান সেই বিষয়টি নিজে আগে ভালোভাবে বুঝে নিন। এবং গল্প করার ভঙ্গিতে খুব সাধারণভাবে ব্যাপারটি বাচ্চাকে বোঝান। তাহলে সে খুব তাড়াতাড়ি ব্যাপারটি শিখতে পারবে।
২. বুঝিয়ে পড়ান
অনেক বাবা-মা এবং শিক্ষক আছেন যারা বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলে এবং জোরজবস্তি তাদের পড়াতে বসান।
এটা একদমই করা উচিত নয়। তাহলে সে পরবর্তীকালে বিগড়ে যেতে পারে। এবং এরকম ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সে আপনার কাছে পড়তে বসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে। এবং আপনি এরপর আরো বেশি তার গায়ে হাত তুলবেন।
এইভাবে পড়াতে থাকলে পড়াশোনা তার মাথায় কিছুই ঢুকবেনা।
এই জন্য যেটুকু পড়াবেন সেটি আগে জেনে নিয়ে তারপর আপনার বাচ্চাকে সেই বিষয়টি বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়ান।
যদি কোন গদ্য বা কবিতা থাকে তাহলে, প্রথমে সেটিকে নিজে বুঝে নিয়ে, গল্পের ছলে বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিন।
আর যদি কোন নামতা বা সংখ্যা শেখাতে চান, তাহলে সুর দিয়ে দিয়ে, ধীরে ধীরে এবং ভদ্র ভাবে পড়াতে পারেন।
৩. শেখার আগ্রহ তৈরি করুন
নির্দিষ্ট বিষয়টি এমনভাবে পড়াবেন যেন তার প্রতি আপনার বাচ্চার আগ্রহ তৈরি হয়। ঠিক যেমন বাচ্চাদের গল্প বললে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ঠিক তেমনই যেকোন বিষয়ে পড়ানোর জন্য, সেই বিষয়ের ওপর আপনার বাচ্চার আগ্রহ তৈরি করতে হবে।
যদি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর একবার আগ্রহ তৈরি হয়, তাহলে আপনার বাচ্চাকে আর জোর করার দরকার পড়বে না। সে নিজে থেকেই বই খুলে পড়তে আরম্ভ করবে।
৪. ভয় দূর করুন
যদি কোন বিষয় আপনার বাচ্চার শক্ত বা কঠিন লেগে থাকে, তাহলে সেই বিষয়টি এমনভাবে পড়ান যেন, নির্দিষ্ট বিষয় থেকে তার ভয় দূর হয়ে যায়।
আপনি নিজে, নির্দিষ্ট বিষয়টি আগে ভালোভাবে বুঝে নিয়ে, সেটিকে সঠিক ভাষায় আপনার বাচ্চার কাছে ব্যক্ত করুন।
৫. মজার সাথে শেখান
বইয়ের ছড়া গল্প নামতা এই সমস্ত কিছু মজার সাথে শেখান। এমনভাবে তাকে নির্দিষ্ট জিনিসটি বলবেন, যেন বলার সময়, নির্দিষ্ট বিষয়টি বলতে বা পড়তে তার নিজের মজা লাগে।
যদি কোন কবিতা বা গল্প শেখাতে চান তাহলে ইউটিউব খুলে প্রথমে তাকে সেই সম্পর্কিত বিষয়টির ভিডিও দেখাতে পারেন। যেখান থেকে সে বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে গল্প এবং কবিতা টি নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নিতে পারবে।
এবং এই রকমভাবে কিছুদিন চলার পর, আপনা-আপনি সে পুরো গল্প বা কবিতা টি মনে রাখতে পারবে।
৬. আপনার ভুল স্বীকার করুন
যদি পড়াতে গিয়ে আপনার কোন ভুল হয় বা কোন কিছু বিষয় ভুল পরিয়ে ফেলেন এবং আপনার বাচ্চা সেই ভুলটি ধরতে পারে, তাহলে তক্ষুনি আপনার ভুল স্বীকার করুন।
যদি আপনি ভুল স্বীকার না করেন তাহলে সে ভবিষ্যতে তার ভুলগুলো স্বীকার করবে না।
সর্বদা মনে রাখবেন, আপনি যেমন আচার-আচরণ তার সাথে করবেন সে তেমনি আচার-আচরণ অন্যদের সাথেও করবে।
আর যদি আপনি কোন ভুল জিনিস করিয়ে ফেলেন এবং সেটা স্বীকার না করেন তাহলে সে ভাববে, তার শিক্ষকই ঠিক জিনিসটি জানেনা তাহলে সে তাকে কিভাবে পড়াবে। এটা হয়তো সে আপনাকে বলবে না কিন্তু তার মনে মনে রাখবে। এইজন্য ভুল হলে সর্বদা স্বীকার করে নিন।
৭. গায়ে হাত না দিয়ে বুঝিয়ে পড়ান
অনেক বাবা-মা আছেন যারা তাদের বাচ্চাদের মারধর করে পড়াতে বসান। এরকমভাবে পড়াতে থাকলে আপনার বাচ্চা কিছু শিখতে পারবেন না। বরং ভয়ের চোটে পড়তে বসার ফলে, আপনি যে জিনিসটি পড়াচ্ছেন সেটি তার মাথায় ঢুকবে না।
এইজন্য পড়ানোর সময় সর্বদা, গায়ে হাত না দিয়ে বুঝিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করুন।
৮. অযথা বকাবকি করবেন না
পড়ানোর সময় যদি সে কোন বিষয় বুঝতে না পারে তাহলে অনেক মা-বাবা অযথা চেঁচামেচি করেন। যার ফলে বাচ্চার এক ধরনের বিরক্ত আসে।
আর এই বিরক্তির কারণে, সে যে জিনিসটি পড়ছে – সেটি সে মাথায় ঢুকাতে পারবেনা। আর সে এই কথাটি ভাবতে থাকবে, “মা-বাবা আবার যেন চেঁচিয়ে না ওঠে!”
এর ফলে তার মন অন্য জায়গায় পড়ে থাকবে। যার কারণে নির্দিষ্ট বিষয় কোনদিনও তার মাথায় ঢুকবে না।
এই জন্য সর্বদা বকাবকি না করে বুঝিয়ে সুজিয়ে পড়ানোর ও শেখানোর চেষ্টা করুন।
উপসংহার
আশাকরি উপরের ইনফর্মেশন থেকে বাচ্চা পড়ানোর নিয়ম সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনার বাচ্চাকে ভালোভাবে পড়াতে ও শেখাতে চান, তাহলে অবশ্যই উপরের নিয়মগুলো মেনে নিয়ে পড়াতে বসানোর চেষ্টা করুন। আশা করছি আপনি এই নিয়ম গুলি মেনে চললে আপনার বাচ্চা; আপনার কাছে, খুব সহজে যে কোন বিষয় শিখতে পারবে। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
আরও পড়ুন