ফেসবুক কি | ফেসবুক কাকে বলে | ফেসবুকের উপকারিতা ও অপকারিতা

ফেসবুক কি – ফেসবুক হল বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। আজকের দিনে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা 500 Million এরও বেশি। যদি আপনিও ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলে ফেসবুকের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি সম্পর্কে আপনার জেনে নেওয়া দরকার। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা আপনার পক্ষে নিরাপদ না ক্ষতিকারক এটি নির্ণয় করার জন্য ফেসবুকের সুফল ও কুফল গুলি অবশ্যই জেনে নিন।

ফেসবুক কাকে বলে?

ফেসবুক হল একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে কানেক্ট হয়ে, তার সাথে চ্যাটিং, ইনফরমেশন শেয়ার, ভিডিও কলিং করার মত ফেসিলিটি গুলি পাওয়া যায়।

এছাড়া ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ বানানো যায় এবং অন্যের গ্রুপের বিভিন্ন ইনফর্মেশন ও তথ্য নেওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিজনেস প্রমোট করা, কোন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে বের করা এবং পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য ফেসবুক কাজে লাগে।

ফেসবুকের উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকের আর্টিকেলে আমরা ফেসবুক ব্যবহার করার সুবিধা ও অসুবিধা গুলি সম্পর্কে জানব। যদি আপনিও ফেসবুক ব্যবহার করেন তাহলে ফেসবুকের সুবিধা ও অসুবিধা আপনার জানা একান্ত প্রয়োজনীয়। যার মাধ্যমে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন ফেসবুক ব্যবহার করা আপনার পক্ষে উচিত না অনুচিত। তাই চলুন ফেসবুকের সুবিধা ও ফেসবুকের অসুবিধাগুলি জেনে নেওয়া যাক।

ফেসবুক ব্যবহারের সুবিধা

প্রথমে আমরা ফেসবুকের সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করব। যার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ফেসবুক কেন আপনার পক্ষে ব্যবহার করা প্রয়োজন। ফেসবুক ব্যবহারের সুবিধা গুলি হল –

১. ব্র্যান্ড এবং ব্যবসার প্রমোশন

ফেসবুক হল আজকের দিনের সব থেকে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এবং এই জন্য ফেসবুকে প্রচুর পরিমাণে ইউজার আছে। যদি আপনার কোন ব্যবসা থাকে আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে তার প্রমোশন করতে পারেন। যাদের আপনার ব্যবসার নাম সবার কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথে, আপনি অনেক বেশি টার্গেট কাস্টমার পেতে পারেন।

এই জন্য ফেসবুকে আপনি একটি পেজ বা গ্রুপ বানিয়ে আপনার ব্র্যান্ড এবং ব্যবসার প্রমোশন করতে পারেন। এটি হলো ফেসবুক ব্যবহার করার সবথেকে বড় সুবিধা।

২. বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের সাথে কানেকশন

ফেসবুক সবথেকে বড় চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হওয়ার কারণে এখানে বেশিরভাগ মানুষই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বানিয়ে থাকে। এবং আপনার অনেক বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়রাও অবশ্যই এখানে অ্যাকাউন্ট বানিয়ে থাকবে। এইজন্য যদি আপনি আপনার কোন বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়দের সাথে কানেকশন তৈরি করে রাখতে চান তাহলে ফেসবুক আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি আপনার অ্যাকাউন্টের সাথে তাদেরকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে, তাদের সাথে কানেকশন তৈরি করতে পারবেন। এবং এরপর তাদের সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে তাদের নতুন নতুন ইমেজ এবং ভিডিও দেখাতে পারবেন।

৩. ভিডিও চ্যাটিং

যদি আপনি ভিডিওর মাধ্যমে কারো সাথে কথাবার্তা বলেছেন তাহলে আপনি ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ফেসবুকে আমাদের বিনামূল্যে ভিডিও চ্যাটিং করার সুবিধা দেয়।

ফেসবুক একাউন্টে আপনারা যে সব বন্ধুরা আছে তারা যদি ফোন নাম্বার ব্যতীত আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগ করার সবথেকে ভাল মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক এর ভিডিও চ্যাটিং।

যেখানে আপনি খুব সহজ পদ্ধতিতে তাদেরকে ভিডিও কল করে তাদের সাথে কথা বলতে পারবেন। এবং এছাড়া আপনার সমস্ত আত্মীয়দের সাথে গ্রুপ তৈরি করে একত্রে কথাও বলতে পারবেন।

৪. ছবি ও ভিডিও আপলোড

ফেসবুকে আপনি আপনার নিজের বর্তমান ছবি, অতীতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি এবং বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। যেসব ছবি ও ভিডিওগুলি আপনার সমস্ত ফেসবুক বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

সুতরাং, যদি আপনার কোনো ছবি বা ভিডিও ভালো লেগে থাকে আপনি সেই সমস্ত ভিডিও গুলি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড করে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দিতে পারবেন।

৫. ফেমাস ব্যক্তি হওয়া

যদি আপনি ফেমাস হতে চান তাহলে ফেসবুক আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্লাটফর্ম। যদি আপনি চান আপনার নাম এবং আপনার কাজকর্ম সবাই জানুক তাহলে ফেসবুকের মাধ্যমে এটি সম্ভব। ফেসবুকে অধিক পরিমাণ ইউজার হওয়ার কারণে, আপনি কোন গ্রুপ বানিয়ে আপনার নামটিকে, খুব সহজেই বিখ্যাত করতে পারবেন।

৬. নতুন কিছু শেখা

আজকের যুগ হলো ইনফরমেশনের যুগ। তাই আপনাকে রোজদিন নতুন নতুন কিছু শিখতে হবে। আর আপনাকে শেখানোর জন্য ফেসবুক আপনার সাথে উপস্থিত রয়েছে। ফেসবুকে আপনি প্রত্যেকদিন নতুন নতুন বিভিন্ন জিনিস শিখতে পারবেন।

কিছু জিনিস দেখবেন আপনার বন্ধু-বান্ধব দের থেকে এবং কিছু শিখবেন বিভিন্ন ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে।

৭. Memory মনে করিয়ে দেওয়া

ফেসবুকে আপনি অতীতে যে সমস্ত ছবিগুলো ছেড়েছেন, সেই ডেট অনুযায়ী বর্তমান ডেটে আপনার সামনে ছবিটি পুনরায় উপস্থিত হবে। এবং তারপরে আপনার পুরনো মেমোরি মনে পড়ে যাবে।

ফেসবুক এইভাবে আপনার প্রত্যেকটি পুরনো ছবি পুনরায় নতুন করে আপনার সামনে বর্তমান ডেটে উপস্থিত করে। এবং সেই ছবিটি আপনি বর্তমানে পুনরায় আবার বন্ধ বান্ধবের সাথে শেয়ার করে, তাদের সাথে আপনার পুরনো মেমরিটি সম্পর্কে জানাতে পারবেন। এটি হল ফেসবুকের সব থেকে ভালো একটি সুবিধা।

৮. আপডেটের খবর এবং ইনফরমেশন

ফেসবুকে অসংখ্য নিউজ গ্রুপ এবং অন্যান্য গ্রুপ আছে। আপনি সেই সমস্ত গ্রুপে যোগদান করে প্রত্যেকদিন আপডেট খবর এবং নতুন নতুন ইনফরমেশন নিতে পারবেন।

ফেসবুকে জয়েন হওয়ার পর আপনাকে আপডেট খবর পাওয়ার জন্য টিভির সামনে বসে থাকতে হবে না। আপনি আপনার সময় মত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন করে ফেসবুকে গিয়ে, সমস্ত আপডেট খবর এবং ইনফরমেশন গুলি নিতে পারবেন।

ফেসবুক ব্যবহারের অসুবিধা

যে কোন জিনিসের যেমন অসুবিধা আছে তেমন অসুবিধাও আছে। তাই যদি আপনি ফেসবুক ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তাহলে ফেসবুক ব্যবহারের অসুবিধা গুলি অবশ্যই জেনে নিন। ফেসবুক ব্যবহারের অসুবিধা গুলি হল –

১. সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি

ফেসবুকের সব থেকে বড় অসুবিধা হলো এখানে একজন ব্যক্তির সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি নষ্ট হয়। ফেসবুকে অনেক ধরনের মানুষ আছে, যারা অনেক ব্যক্তির পার্সোনাল ফটো এবং ভিডিওগুলি খারাপ কাজে ব্যবহার করে।

এবং এর সাথে সাথে অনেক ব্যক্তির পার্সোনাল ইনফরমেশন অনেক ব্যক্তির সামনে চলে আসে। যার কারণে তাদের প্রাইভেসি নষ্ট হয়।

যদি আপনি আপনার ব্যক্তিগত ইনফরমেশন এবং নিজের সিকিউরিটি রাখতে চান তাহলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা আপনার পক্ষে উচিত নয়।

২. সময় নষ্ট

অনেক ব্যক্তি আছে যারা সারাদিন ফেসবুক ব্যবহার করে। যার ফলে তাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।

সঠিক সময় যে কাজটি করা প্রয়োজন, সেই কাজটি তারা না করে সারাদিন ফেসবুক ব্যবহার করে। এবং অতিরিক্ত কার্যকলাপ করে তারা জীবনের অনেক সময় শুধু শুধু অতিবাহিত করে।

আপনি যদি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে ভালো কিছু করতে চান তাহলে যতটুকু দরকার ততটুকু ফেসবুক ব্যবহার করুন।

৩. Fake ফেসবুক প্রোফাইল

ফেসবুকে অনেক ফেক প্রোফাইল রয়েছে। যারা আপনার বন্ধু বান্ধব দের এখন বানিয়ে আপনাদের সাথে কানেকশন তৈরি করার চেষ্টা করে। এবং আপনারা তাকে অরজিনাল মনে করে আপনার ব্যক্তিগত ইনফরমেশন তাদের সাথে শেয়ার করে থাকেন।

এই ধরনের ভ্রম থেকে বাঁচতে আপনাকে ফেসবুক থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং যদি ফেসবুক ব্যবহার করতে চান তাহলে নির্দিষ্ট একাউন্টটি অরিজিনাল কিনা সেটি যাচাই করবার পর তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করুন।

৪. লাইক এবং কমেন্ট পাওয়ার ইচ্ছা

অনেক ব্যাক্তি আছে যারা শুধুমাত্র লাইক এবং কমেন্ট পাওয়ার জন্য ফেসবুকে বেশিরভাগ সময়ই নতুন নতুন ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করে থাকেন।

যার কারণে তাদের মনে সারাদিন ফেসবুক খোলার ইচ্ছা জাগে এবং তাদের ভিডিও বা ছবি তে কত লাইক এবং কমেন্ট হলো, সেটা তারা জানতে চাই। এবং এই জন্য তাদের মনে সর্বদাই ফেসবুক লাইক কমেন্ট চিন্তাটা লেগে থাকে। যার করে না তারা নির্দিষ্ট কোন কাজে মন লাগাতে পারে না।

৫. ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করা

ফেসবুক হল একটি ভার্চুয়াল দুনিয়া। এবং এই দুনিয়াতে প্রবেশ করলে আপনার পরিবার-পরিজনদের সাথে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না।

মানুষ তখন ফেসবুককেই তাদের আসল দুনিয়া বলে মনে করে। এবং এই কারণে তারা প্রকৃত বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের থেকে দূরে সরে যায়।

৬. সাস্থ্য ও শরীরের ক্ষতি

অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করলে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। যার কারণে অনেক ব্যক্তি স্বাস্থ্য ও শরীরে ক্ষতি হয়ে থাকে।

সারাদিন ফেসবুক ব্যবহার করলে মাথার উপর চাপের সৃষ্টি হয় এবং মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। তাই আপনার স্বাস্থ্য বছরের উপর নজর রাখতে আপনি ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন।

ফেসবুক ব্যবহারের সুফল ও কুফল

আশাকরি উপরের ইনফর্মেশন থেকে আপনি ফেসবুক ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। এখন আমরা এখানে এক নজরে ফেসবুক ব্যবহারের সুফল ও কুফল টি আর একবার জেনে নেব।

ফেসবুক ব্যবহারের সুফল

  • বিনামূল্যে চ্যাট করার সুবিধা
  • ভিডিও চ্যাটিং এর মাধ্যমে অনেক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ তৈরি করা
  • নতুন নতুন ছবি ও ভিডিও আপলোড করার সুবিধা
  • মনোরঞ্জন করা
  • পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পাওয়া
  • নতুন নতুন ইনফরমেশন দেওয়া ও নেওয়া
    মেমোরি বা অতীত কে আরেকবার দেখে নেওয়া
  • নিজেকে আপডেট রাখা যায়
  • বিভিন্ন ফিচারস এর মাধ্যমে, চ্যাট করার সুবিধা
  • নিজের ব্যবসা কে প্রতিষ্ঠা করা
  • অনলাইন ব্যবসা তৈরি করা
  • নিজের গ্রুপ এবং পেজ বানানো যায়
  • ইত্যাদি।

ফেসবুক ব্যবহারের কুফল

  • নিজের প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি নষ্ট করা
  • স্বাস্থ্য এবং শরীরের ক্ষতি
  • মানসিক চাপের সৃষ্টি
  • লাইক এবং কমেন্ট পাওয়ার আসক্তি
  • মূল্যবান সময় নষ্ট করা
  • অন্যকে দেখে নিজেকে ছোট মনে করা
  • ফেক ফেসবুক একাউন্টের সাথে যোগাযোগ করে, নিজের ব্যক্তিগত ইনফরমেশন দেওয়া
  • পরিবার-পরিজনদের থেকে দূরে সরে যাওয়া
  • ভার্চুয়াল দুনিয়া কে, সত্যিকারের  দুনিয়া ভাবা
  • ইত্যাদি।

উপসংহার

আশাকরি উপরের ইনফর্মেশন থেকে ফেসবুকের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনি ফেসবুক ব্যবহার না করে থাকেন বা ব্যবহার করছেন, তাহলে আজকের পর থেকে আপনার ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত না অনুচিত এটি নির্ণয় করে নিন। আশা করছি উপরের ইনফর্মেশন থেকে ফেসবুক আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কিনা আপনি সেটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Comment