ইউটিউব থেকে আয় করার ৫ টি সঠিক উপায়

ইউটিউব থেকে আয় করার পদ্ধতি – আজকের এই ইন্টারনেটের যুগে অফলাইন থেকে পয়সা কামানোর সাথে সাথে অনলাইন থেকে আয় করারও রাস্তা রয়েছে। এবং এগুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হলো ইউটিউব। একজন ইউটিউবার, ইউটিউব এ চ্যানেল বানিয়ে, সেই চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আপলোড করে প্রচুর টাকা আয় করতে পারে।

যদি আজকের দিনে আপনিও ইন্টারনেট থেকে টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে আপনিও একজন ইউটিউবার হতে পারেন। কিন্তু ইউটিউবার হওয়ার পর আপনি কোন কোন নিয়মে টাকা রোজগার করতে পারেন সেটা আপনার জানা জরুরী। এই জন্য আজকের এই আর্টিকেলে ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করতে হয় এই সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

আগের আর্টিকেল এ, আমি ঘরে বসে পার্ট টাইম জব করার কিছু উপায়ের কথা বলেছিলাম। আপনি চাইলে সেই আর্টিকেলটি একবার পড়ে নিতে পারেন। তবে যদি আপনি, শুধুমাত্র একজন ইউটিউবার হয়ে অনলাইনে টাকা আয় করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ইউটিউব থেকে আয় করার ৫ টি উপায়

ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম এর উপায় জানার আগে আপনি ইউটিউব একাউন্ট কিভাবে বানাতে হয় জেনে নিন। কারণ আপনি ইউটিউব থেকে টাকা তখনই কামাতে পারবেন যখন আপনি অ্যাকাউন্ট বানিয়ে সেখানে নিত্য নতুন ভিডিও আপলোড করবেন।

যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেল বড় হয় তাহলে, এখানে যে সমস্ত ইউটিউব থেকে ইনকাম করার উপায় গুলি বলা হয়েছে এগুলো থেকে আপনি ভালো পরিমাণে টাকা আয় করতে পারবেন।

১. Google Adsense

ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল বানানোর পর সেই চ্যানেলে ট্রাফিক আসলে, আপনি গুগলের তৈরি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন আপনার ভিডিওর উপরে দেখিয়ে, টাকা ইনকাম করতে পারেন।

যদি আপনি এডসেন্স এর সাহায্যে আপনার ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করেন তাহলে সেখানে, গুগল এডসেন্স এর contextual ads আপনার ভিডিওর উপরে দেখানো হবে। যখন কোন ইউজার আপনার যে ভিডিওগুলো দেখবে, তখন ইউজার এর Click এবং inpression এর ওপর ভিত্তি করে, আপনাকে গুগোল টাকা দেবে।

গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউবে টাকা ইনকাম হলো, ইউটিউব থেকে টাকা কামানোর সবথেকে সহজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে আপনি কম সময়ে, খুব বেশি Hard Work না করেই; আপনার চ্যানেল থেকে, ভালো পরিমাণে টাকা আয় করতে পারেন।

২. Sponsored Video

এই পদ্ধতিতে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য, আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভালো পরিমাণ ট্রাফিক থাকা প্রয়োজন। যখন আপনার ইউটিউব চ্যানেল টি বড় হয়ে যাবে তখন, বিভিন্ন ধরনের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানি আপনার সাথে যোগাযোগ করে, তাদের সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট এর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আপনার চ্যানেলে করতে বলবে।

এবং নির্দিষ্ট অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে। আপনি আপনার ভিডিওর শুরুতে বা শেষে, এই সব অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করে প্রচুর পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন।

আজকের দিনের কিছু বড় ইউটিউবার এক একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস, তাদের চ্যানেল প্রমোট করার জন্য ১০,০০০ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিমান্ড করে। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে, অনলাইন থেকে টাকা আয় করা কতটা লাভজনক।

৩. Affiliate Marketing

ইউটিউব থেকে ইনকাম করা তৃতীয় যে পদ্ধতিটি আছে সেটি হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে, অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করলে সেই প্রোডাক্ট থেকে কিছুটা কমিশন পাওয়া যায়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যদি কোন প্রোডাক্ট আপনি বিক্রি করতে পারেন তাহলে সেই কোম্পানি আপনাকে, নির্দিষ্ট প্রোডাক্টটির উপর ভিত্তি করে কিছু কমিশন দেবে।

এই জন্য সরাসরি আপনাকে কোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে হবে না। আপনি কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইট এ গিয়ে সেখানে অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট বানিয়ে, যে সমস্ত প্রোডাক্ট গুলি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাহায্যে রিভিউ করে, সেই প্রোডাক্টটির এফিলিয়েট লিংক আপনার ডেসক্রিপশন বক্সে দিয়ে দিতে পারেন।

যখন কোন ইউজার আপনার ওই লিঙ্ক থেকে ওই প্রোডাক্টে কিনবে তখন আপনি ওই প্রোডাক্টের মূল্য অনুযায়ী কমিশন পেয়ে যাবেন। শুধুমাত্র, আফিলিয়েট মার্কেটিং এর উপর ভিত্তি করে আজকাল প্রচুর ইউটিউবার, মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে।

৪. Ebook Selling

ইউটিউবে ইনকাম করার একটি ভালো উপায় হলো Ebook বিক্রি। যদি আপনার নিজস্ব কোন লেখা বই থাকে, তাহলে আপনি সেই বই আপনার চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন।

কিংবা অন্য কারো লেখা বই আপনার চ্যানেলের বিক্রি করে তার থেকে ডাইরেক্ট কমিশন নিতে পারেন।

৫. Sale Own Product

যদি আপনার কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাবসা থাকে, তাহলে আপনি নিজের প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার প্রোডাক্ট গুলি ও, আপনার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন।

আপনার ব্যবসার প্রডাক্ট গুলির উপর ভিত্তি করে আপনি, আপনার চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বানিয়ে, সেখানে Targeted Visitors নিয়ে এসে, আপনার প্রোডাক্ট গুলি বিক্রির রাস্তা তৈরি করতে পারেন।

আশা করি ইউটিউব থেকে আয় কিভাবে করে এটি আপনি বুঝে গেছেন। এবার আমরা ইউটিউব ইনকাম বাড়ানোর কিছু টিপস জানবো।

ইউটিউব থেকে ইনকাম বাড়ানোর জন্য কি করবেন?

ইউটিউবে আপনি যত ইউজার বা subcriber বাড়াতে পারবেন, তত আপনি আয় করতে পারবেন। যদি নিচে দেওয়া টিপস গুলি আপনি ফলো করে ভিডিও বানান, তাহলে আপনার চ্যানেলে বেশি সংখ্যক ভিজিটর আসবে। এবং ভিজিটর বেশি এলে, আয় ও বেশি হবে।

  • এমন সব ট্রেন্ডিং ভিডিও বানান, যেগুলোর সার্চ ইন্টারনেটে সবথেকে বেশি হয়।
  • এমন ভিডিও বানাবেন যেগুলি সর্বদা কাজে লাগে। যেমন: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম।
  • ভিডিওকে ইন্টারেস্টিং করে তুলুন।
  • ইউজারদের লাইক, কমেন্ট এবং সাবস্ক্রাইব করার জন্য আগ্রহী করে তুলুন।
  • High Quality যুক্ত ভিডিও বানান।
  • অন্য সব Youtuber দের সাথে যুক্ত হয়ে, একে অন্যের সাথে Colaborate করুন।
  • ভিডিওর হিসাবে Title, Description এবং tag যোগ করুন।
  • Attractive Thumbnail দিন।

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?

আপনার ইউটিউব চ্যানেলে, আপনি যত বেশি ভিজিটর নিয়ে আসতে পারবেন তত টাকা ইনকাম করতে পারেন। কখনো কখনো হাজার ভিউতে হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন আবার কখনও কখনও ১০ হাজার ভিজিটর এলেও হাজার টাকা উপার্জন করতে কষ্টকর হয়।

যদি আপনি অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যাবহার করেন, তাহলে সেই লিঙ্ক থেকে যদি ১ জন কিছু কেনে, আপনি ১ টি ভিউ এ ১০০ টাকা পর্যন্ত কামাতে পারেন।

আবার এডসেন্স অ্যাডস এর ওপর ১০০০ ভিউ এলেও, ১০০ টাকা ইনকাম করা কঠিন হয়।

মানে, সবকিছুই নির্ভর করে আপনার ট্রাফিক এবং ইনকাম করার উপায় এর ওপর। তবে আজকের দিনে বেশিরভাগ ইউটিউবার বিভিন্ন উপায়ে, মাসে ৫০,০০০ এর বেশি টাকা ইনকাম করছে।

ইউটিউব থেকে আয় করা কি সহজ?

পৃথিবীতে কোনো কিছুই সহজ নয়। একটি নির্দিষ্ট কাজ কারো কাছে সহজ, আবার কারো কাছে কঠিন। তবে ইউটিউব এর ক্ষেত্রে যদি বলা হয় তাহলে আমি বলবো, যদি আপনার মধ্যে ভিডিও বানিয়ে মানুষের উপকার করার Passion থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।

আর যদি আপনি লোকেদের উপকারের কথা না ভেবে, শুধুমাত্র ইনকাম এর জন্য ইউটিউব এ আসেন তাহলে ইউটিউব থেকে আয় করা আপনার পক্ষে খুবই কঠিন।

উপসংহার:

আশা করি ওপরের ইনফরমেশন থেকে ইউটিউব থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় এ ব্যাপারে বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনিও, আপনার ইউটিউব চ্যানেল বানাতে চান তাহলে আজই নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে, অনলাইন ইনকাম করা শুরু করে দিন।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment