কম্পিউটার জেনারেশন কি | সকল প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

আজকে আমরা যে কম্পিউটার গুলি ব্যবহার করছি সেগুলি বিভিন্ন বিবর্তন এবং বিকাশের মধ্যে দিয়ে উন্নতি করা হয়েছে। কম্পিউটারের প্রতিটি বিবর্তনকে এক একটি জেনারেশন বা প্রজন্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়। তবে অনেক কম্পিউটার ব্যবহার করি এমনও আছে যারা এ সকল প্রয়োজন গুলিতে কি হয়েছে এই সম্পর্কে বিশেষ জানেন না।

এই জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আমরা কম্পিউটার জেনারেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যেখান থেকে আপনি কম্পিউটার প্রজন্ম কি, সকল প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য এবং কম্পিউটার প্রজন্মের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। কম্পিউটার জেনারেশন সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

কম্পিউটার জেনারেশন কি?

কম্পিউটার প্রজন্ম কি – কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত বিবর্তন কে কম্পিউটার জেনারেশন বলা হয়। কম্পিউটার বর্তমান জায়গা পর্যন্ত আসার জন্য অনেক বছর সময় নিয়েছে এবং প্রতিটি পথ অতিক্রম করে আজকের এই মডার্ন কম্পিউটারের যুগে প্রবেশ করেছে। এই যে পরিবর্তন এবং বিবর্তন এটাকেই কম্পিউটার প্রজন্ম বা কম্পিউটার জেনারেশন বলা হয়ে থাকে।

কম্পিউটারের বিকাশের এক একটি পর্যায় বা ধাপকে এক একটি কম্পিউটার প্রজন্ম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

১৯৪৬ সাল থেকে বর্তমান দিন পর্যন্ত কম্পিউটারের মূল বিকাশ মোট পাঁচবার হয়েছে। এইজন্য কম্পিউটার এখন পর্যন্ত চারটি জেনারেশন পার করেছে এবং পঞ্চম জেনারেশনে সময় কাটাচ্ছে।

কম্পিউটার জেনারেশন বলতে কী বোঝায়?

কম্পিউটার জেনারেশন বলতে কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত বিবর্তন কে বোঝানো হয়। প্রতিটি প্রজন্মে বাজানো রেশনে কম্পিউটারের কিছু না কিছু বিকাশ বা উন্নতি হয়েছে। এই সকল বিকাশ গুলিকেই বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবং প্রতিটি প্রজন্মেই কম্পিউটারের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

এখন আমরা কম্পিউটার প্রজন্মের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেব। কোন প্রজন্মে কম্পিউটারের কি বিকাশ হয়েছে এই সমস্ত কিছু ডিটেলসে এখান থেকে জেনে নিন।

কম্পিউটার জেনারেশন কয়টি?

বর্তমান সময় পর্যন্ত কম্পিউটারের জেনারেশন বা প্রজন্ম পাঁচটি। সেগুলি হলো –

  • প্রথম প্রজন্ম (১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯)
  • দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৯ থেকে ১৯৬৫)
  • তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৫ থেকে ১৯৭১)
  • চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭১ থেকে ১৯৮০)
  • পঞ্চম প্রজন্ম (১৯৮০ থেকে আজ পর্যন্ত)

প্রথম প্রজন্ম (first generation)

১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সময়টিকে কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম বলা হয়। Dr. John V. Atanasoff এবং Clifford Berry এই দুইজন মিলে প্রথম electronic digital computer তৈরি করেছিলেন।

এই প্রজন্মের সকল কম্পিউটার গুলোর মধ্যে Vacuum Tubes এর ব্যবহার হত।

Vacuum টিউব খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যাওয়ার কারণে কম্পিউটার খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যেত। সিপিইউ এবং মেমোরি তৈরি করার জন্য এই টিউবের ব্যবহার হত।

প্রথম যে ইলেক্ট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটারটি তৈরি করা হয়েছিল তার নাম ছিল Atanasoff-Berry Computer (ABC)। এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালে জেনারেল পারপাসের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করা হয়। যার নামকরণ করা হয় Electronic Numerical Integrator and Computer (ENIAC)।

এই কম্পিউটারটির ওজন ছিল ৩০০০ কেজি মতো। যেটি ছিল একটি ঘরের সমান। এবং এই ধরনের কম্পিউটার তৈরি করার জন্য 18000 vacuum tubes এর ব্যবহার করা হতো।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার গুলি একটি সময় একটি কাজ করতে পারত। এবং এই ধরনের কম্পিউটার গুলিকে ইনপুট এবং আউটপুট দেওয়ার জন্য Punch cards, paper tape, এবং magnetic tape এর ব্যবহার করা হতো।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • ভ্যাকুয়াম টিউব টেকনোলজির ব্যবহার হত
  • কম্পিউটার খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যেত
  • জটিল কাজ করার সময় রেজাল্ট ভুল বের হতো
  • প্রসেসর খুবই স্লো ছিল
  • কম্পিউটারের সাইজ একটি ঘরের মতো হতো
  • কম্পিউটার ঠান্ডা করার জন্য এসির ব্যবহার করা হতো
  • সব থেকে ব্যয়বহুল কম্পিউটার ছিল
    এই ধরনের কম্পিউটার চালানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হতো

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার

ENIAC, EDVAC, UNIVAC, IBM-701, IBM-650 এগুলো হলো কিছু প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।

দ্বিতীয় প্রজন্ম (second generation)

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের সময়সীমা ছিল ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত। এই প্রজন্মের কম্পিউটার গুলিতে vacuum tubes এর বদলে transister এর ব্যবহার করা হতো।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার গুলি প্রথম প্রজন্মের থেকে অনেক ফাস্ট ছিল। এবং ট্রান্সিস্টার ব্যবহার করার ফলে বিদ্যুৎ খরচ কম এবং কম্পিউটারের সাইজ অনেক ছোট হয়ে যায়।

এই ধরনের কম্পিউটারে প্রাইমারি মেমোরি তৈরি করার জন্য magnetic cores এর ব্যবহার শুরু হয়। এবং সেকেন্ডারি মেমোরি তৈরি করার জন্য magnetic tape এবং magnetic disk এর ব্যবহার হয়।

এই প্রজন্মের প্রথম কম্পিউটারটির নাম হল Universal Automatic Computer (UNIVAC 1) যেটি ১৯৫১ সালে তৈরি করা হয়। এর কিছুদিন পর International Business Machine (IBM) এর দ্বারা “IBM 650” নামক আরেকটি কম্পিউটার তৈরি করা হয়। এবং এটি মানুষের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

এছাড়া এই জেনারেশানে প্রোগ্রামিং ভাষারও আবিষ্কার হয়। যার মধ্যে assembly language এবং high-level programming language ও স্থান পায়। এবং আউটপুট নেওয়ার জন্য প্রিন্টার এর ব্যবহার প্রথম এই প্রজন্মেই হয়ে থাকে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • ট্রানসিস্টার এর ব্যবহার করা হয়
  • প্রথম প্রজন্মের থেকে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের সাইজ অনেক ছোট
  • দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার গরম কম হতো
  • প্রসেসিং স্পিড বেশি ছিল
  • বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়
  • প্রথম প্রজন্মের থেকে আরও সঠিক আউটপুট দিতে পারতো।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার গুলির মধ্যে অন্যতম হলো IBM 1620, IBM 7094, CDC 1604, CDC 3600, UNIVAC 1108।

তৃতীয় প্রজন্ম (third generation)

তৃতীয় জেনারেশনের সময়সীমা ছিল ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে। এই প্রজন্মে Transister এর বদলে Integrated Circuit (IC) এর ব্যবহার হয়। যার কারণে কম্পিউটারের সাইজ আগের থেকেও অনেক ছোট হয়ে যায়।

একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এর মধ্যে transistors, registers এবং capacitors থাকে। এই প্রজন্মের কম্পিউটার গুলোর মধ্যে very large scale Integration (VLSI) technology এর ব্যবহার শুরু হয়। যে কারণে কম্পিউটার অনেক ফাস্ট, reliable এবং আকারে অনেক ছোট হয়ে যায়।

এছাড়া তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার গুলোর মধ্যে remote processing, time-sharing, multiprogramming operating system এর ব্যবহার শুরু হয়। এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরি করার জন্য FORTRAN-II, III, IV, COBOL, PASCAL PL, BASIC, ALGOL-68 এই সকল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ গুলোর ব্যবহার করা হত।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • এই প্রজন্মে Integrated Circuit (IC) এর ব্যবহার করা হয়
  • কম্পিউটার আগের থেকেও বেশি বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করে
  • হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ এর ব্যবহার করা হতো
  • আগের দুই জেনারেশনের কম্পিউটার থেকে প্রসেসিং ক্ষমতা বেশি ছিল
  • বিদ্যুৎ খরচ কম হতো
  • আগের দুই প্রজন্মের মতো এসির ব্যবহার এই প্রজন্মেও করা হতো।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার

IBM-360 series, Honeywell-6000 series, PDP (Personal Data Processor), IBM-370/168, TDC-316 এই সকল কম্পিউটার গুলি গুলো তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।

চতুর্থ প্রজন্ম (fourth generation)

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার এর সময়সীমা ছিল ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত। চতুর্থ প্রজন্ম যে টেকনোলজি ব্যবহার করা হতো তার নাম হলো Very Large Scale Integrated (VLSI) circuits।

এই ধরনের circuits গুলির মধ্যে 5000 transistors থাকতো। চতুর্থ প্রজন্ম হল Microcomputer এর যুগ। এই প্রজন্মের কম্পিউটার গুলি Reliable, faster এবং আজকের দিনের ডেক্সটপ এর মত সাইজের হতো।

চতুর্থ প্রজন্মে যে কোন ব্যক্তি পার্সোনাল কম্পিউটার কিনতে এবং ব্যবহার করতে পারত। এই প্রজন্মেই বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহার করা শুরু হয়।

চতুর্থ প্রজন্মে time sharing, real time networks, distributed operating system ব্যবহার শুরু হয় যেটি এখনো পর্যন্ত হয়ে আসছে। এই প্রজন্মের জন্য সফটওয়্যার তৈরির জন্য যে সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলির ব্যবহার করা হতো তার নাম হলো C, C++, DBASE ইত্যাদি।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • VERY LARGE SCALE INTEGRATION (VLSI) টেকনোলজির ব্যবহার শুরু হয়
  • আগের তিন জেনারেশন থেকে কম্পিউটার অনেক সস্তা হয়
  • যে কোন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারত
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেত
  • কম্পিউটার ঠান্ডা করার জন্য এসির ব্যবহার করতে হতো না
  • বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমে যায়
  • একসাথে অনেক গুলি কাজ করা সম্ভব হয়

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার

কিছু চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের নাম হলো DEC 10, STAR 1000, PDP 11, CRAY-1(Super Computer), CRAY-X-MP(Super Computer) ইত্যাদি।

পঞ্চম প্রজন্ম (fifth generation)

বর্তমানে সময়টি পঞ্চম প্রজন্ম চলছে। অর্থাৎ এই প্রজন্মের সময় হলো ১৯৮০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত। বর্তমানে যে সকল টেকনোলজি গুলির ব্যবহার করা আছে সেগুলি হল VLSI TECHNOLOGY, ULSI (Ultra Large Scale Integration) technology।

এই ধরনের টেকনোলজির কারণে একটি MICRO PROCESSOR এরমধ্যে এক কোটিরও বেশি transisters অন্তর্ভুক্ত থাকে।

আজকালকার দিনে প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটার গুলোর মধ্যে AI Technology এর ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং যে কারণে একটি কম্পিউটার একটি মানুষের থেকে অনেক দ্রুত গতিতে যে কোন কিছু করতে পারে। AI এর মানে হলো মানুষের মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশ করানো। এবং পঞ্চম প্রজন্মে সমস্ত প্রোগ্রাম গুলি হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজে তৈরি করা হয়।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • Multi Processor এর ব্যবহার করা হচ্ছে
  • AI , VLSI, ULSI এর মতো টেকনোলজি গুলির মাধ্যমে কম্পিউটারকে আরো উন্নত করা হচ্ছে
  • ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস এর মাধ্যমে কাজ করা হয়
  • প্রত্যেকটি কম্পিউটারে মাল্টিমিডিয়া ফিচার্স অন্তর্ভুক্ত করা আছে
  • Voice Search, Image Recognition, deep learning ইত্যাদি কাজ গুলি খুবই সহজে করা যায়
  • Natural language processing এর কনসেপ্ট এর উপর ভিত্তি করে সমস্ত কাজ করা হচ্ছে।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার

Desktop, Laptop, NoteBook, UltraBook, ChromeBook এই সমস্ত কিছুই পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ।

উপসংহার

আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম যে প্রতিটি প্রজন্মেই কম্পিউটারের মধ্যে কিছু না কিছু বিবর্তন হয়েছে। এবং প্রতিটি বিবর্তনের পরেই কম্পিউটারের মধ্যে বিকাশ হয়েছে। এবং এই বিকাশের পেছনে অনেক বিজ্ঞানী এবং ডেভলপারদের অবদান রয়েছে। যারা শুধুমাত্র মানুষের কাজের সুবিধার্থে কম্পিউটারকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করছে।

ভবিষ্যতে যে সমস্ত প্রজন্ম গুলি আসবে সেগুলোতেও আমরা কম্পিউটারকে আরো next লেভেলে দেখতে পাবো। এবং তখন কম্পিউটার মানুষের থেকেও তেজ গতিতে কাজ করবে এবং মানুষের মতোই চিন্তা ভাবনা করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Comment